Skip to main content

পিরোজপুরের গুণী নৃত্য গুরু তানিয়া



একাধারে একজন নৃত্যশিল্পী, একজন সোস্যাল অ্যাক্টিভিস্ট, আবার একজন নৃত্যগুরু। নাচই তার ধ্যান-জ্ঞান। তার যাপিতজীবন শুধু নাচকে ঘিরেই। তিনি পিরোজপুরের সর্বজন প্রিয় নৃত্যশিল্পী, নৃত্য সংগঠক  ফেরদৌসী রহমান (তানিয়া)।সবাই যাকে তানিয়া নামেই বেশি চেনে। পিরোজপুরের শিল্পকলার একজন গুণী নৃত্য শিক্ষকও তিনি।
ফেরদৌসী রহমান (তানিয়া)
কথা হয় নৃত্য অন্তঃপ্রাণ এই মানুষটির সঙ্গে। amarpirojpur.com এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুম মুনিরা'র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি জানান তার নৃত্যগুরু হয়ে ওঠার গল্প, নৃত্য নিয়ে আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা।

সিরাজুম মুনিরা: বেড়ে ওঠা এবং লেখাপড়া জীবন সম্পর্কে কিছু বলুন?
ফেরদৌসী রহমান (তানিয়া): জন্ম এবং বেড়ে ওঠা পিরোজপুরেই।পড়াশুনার হাতেখড়ি মোরশেদ স্মৃতি শিশু নিকেতন,মাধ্যমিক পিরোজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং এম.এ শেষ করেছি খুলনা বি.এল কলেজ থেকে।

সিরাজুম মুনিরা:কবে থেকে নাচ শেখা শুরু করলেন?
ফেরদৌসী রহমান (তানিয়া):স্কুল এ ভর্তি হওয়ার আগেই নাচ শেখা শুরু করি  শখ বসত।
নাচ টা আম্মুর খুব পছন্দের ছিলো তার জন্যই নাচ শেখা শুরু হয় আমার তবে,আব্বু পছন্দ করত না বলে লুকিয়ে লুকিয়ে নাচ শিখতাম অনুষ্ঠান আর প্রতিযোগিতা সবই আব্বু কে না জানিয়ে করা।নাচ শেখা শুরু করার পরে আমি মোরশেদ স্কুল এ ভর্তি  হই।মূলত এভাবেই  শৈশব কাল থেকেই নাচ শেখা শুরু।

সিরাজুম মুনিরা:সেই নাচটাকেই কবে পেশাগত ভাবে রূপ দেয়ার চিন্তা করলেন?
ফেরদৌসী রহমান (তানিয়া): নাচ কে কখনই আমি পেশা হিসেবে দেখিনি নাচ কে আমি শখ হিসেবেই দেখতাম আর আজও তাই আমি যত টুকু নাচ সম্পর্কে  জানি ঠিক ততোটাই যারা নাচকে ভালোবাসে তাদের কে শিখিয়েছি কোন টাকার লোভে না।
শিল্পকলায় আমার চাকরি হয় ২০০৬ সালে তখন আমি উচ্চমাধ্যমিক  ১ম বর্ষে  পড়ি ২০০৬ সালে শিল্পকলায় একটা টিচার্স ট্রেনিং হয় সেখানে অনেক নাচের শিক্ষকদের সাথে আমিও শখবসত সেই ট্রেনিং এ যোগদান করি তবে সেখানে চট্টগ্রাম থেকে নৃত্য প্রশিক্ষক আসেন প্রেমা অবন্তী। তিনি আমার নাচ দেখে তার সহযোগি হিসেবে আমাকে তার সাথেই রাখা শুরু করে। এর পরে হঠাৎ একদিন তিনি আমাকে ফোন দিয়ে জানান পিরোজপুর শিল্পকলায় নৃত্য প্রশিক্ষক নিবে এবং আমাকে নাকি শিল্পকলা থেলে ডাকবে আমি যেনো তখন শিল্পকলায় যাই।এভাবেই  আমার শিল্পকলায় নৃত্য প্রশিক্ষক হওয়া তবে আমার আব্বু বলতো শিল্পকলায় শিক্ষক হয়েছো ভালো কিন্তুু তুমি কারো বাসায় গিয়ে নাচ শিখাতে পারবে না।

সিরাজুম মুনিরা:প্রথম নাচতে গিয়ে কোন মজার স্মৃতি কিংবা দু:স্মৃতি মনে পড়ে?
ফেরদৌসী রহমান (তানিয়া):হুম মজার তো কত কথা আছে! আগেই বলেছি আমি যেসকল অনুষ্ঠান করতাম তা আব্বু জানত না তাই সব অনুষ্ঠান এর আগে আম্মু জেনে নিতো আমরা কয়টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করে আসতে পারব। একবার নাজিরপুরে একটা অনুস্ঠানে গেছিলাম, ওনারা বলেছিল ৯ টায় আমরা পিরোজপুর চলে আসতে পারব তবে দুঃখের বিষয় হলো,কথায় আছে চোরের ১০ দিন আর গৃহস্তের ১ দিন। ঐ দিন নাজিরপুর থেকে আমরা ঠিকই ৯.১৫ তে রওনা দেই কিন্তুু মাঝপথে গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। না পারি পিরোজপুর আসতে!না পারি নাজিরপুর যেতে। তখন মোবাইল নেটওয়ার্ক  অতোটা উন্নত হয়নি।ঐ দিন আব্বু আমার নৃত্য গুরুর বাসায় গিয়ে তার পুরা পরিবারের সাথে রাগ  করে আসে এবং আমার দাদী,ফুপি সবাই কে বকা দেয়। ঐ রাত ছিলো আমাদের পুরো নৃত্য টিমের জন্য একটা ভয়ংকর রাত।

সিরাজুম মুনিরা:আপনার শিল্পী জীবনের উল্লেখযোগ্য পুরস্কার কথা যদি বলতেন? এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো লাগার পুরষ্কার বা অর্জন কোনটি??
ফেরদৌসী রহমান (তানিয়া):জাতীয় পর্যায়ের যত প্রতিযোগিতা হয়েছে আমাদের সময়ে তখন জেলা পর্যায় আমি বহুবার  লোক,উচ্চাঙ্গ নৃত্যে ১ম হয়েছি। ২০১১ তে বরিশাল বিভাগীয় পর্যায়  থেকে উচ্চাঙ্গ নৃত্যে ১ম হই। তখন ঢাকা শিল্পকলায় যাই এবং জাতীয় পর্যায়ে  ৩য় স্থান অর্জন করি। এটিএন ও এনটিভি তে প্রোগ্রাম করেছি।আমি আজ পর্যন্ত যতোটুকু অর্জন করেছি তা আমার যোগ্যতায়।

সিরাজুম মুনিরা:এই অঙ্গনে খারাপ লাগা কোন স্মৃতি কি আছে যেটা আপনার মনে পড়লে খুবই খারাপ লাগে?
ফেরদৌসী রহমান (তানিয়া):একটাই কষ্ট লাগে মাঝে মাঝে যখন কেউ আমার সাথে কোন কিছুতে পেরে না ওঠে তখন নরত্বকী বলে পিছনে নোংরা কথা বলে আসলে নরত্নকী তো আমরা না নরত্বকী তো তাদের বলা হয় যারা টাকার বিনিময়ে হোটেলে অন্য লোকের বাড়ি বা রাজা বাদশার বাড়ি নাচ করত বা করে তাদের।

সিরাজুম মুনিরা:নৃত্যজগতে আপানার আইডল  বা পছন্দের শিল্পী কে?
ফেরদৌসী রহমান (তানিয়া):আমি যার জন্য আজ শিল্পকলার প্রশিক্ষক, যার ভালোবাসা আর সাহসে আমি অল্প বয়সে প্রশিক্ষক হওয়ার সাহস এবং মনে জোর পেয়েছি তিনি হলেন প্রেমা অবন্তী। তিনি বাংলাদেশের একজন বড় নৃত্য শিল্পি।কুনতাল বড়ুয়া তার স্বামী।

সিরাজুম মুনিরা:যারা পিরোজপুরে শিল্পকলায়  নৃত্য শিখতে চায় তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কি?কিভাবে শেখার সুযোগ পেতে পারে?
ফেরদৌসী রহমান (তানিয়া):শিল্পকলায় জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ভর্তি নেয়া হয়।আগ্রীম ৬ মাসের বেতন সহ সাথে ২কপি ছবি আর জন্ম নিবন্ধন জমা দিতে হয়।

সিরাজুম মুনিরা:ছোট বেলা থেকেই আপনাকে অনেক প্রানবন্ত দেখি, আপনার তারুণ্যেরর রহস্য কি?
ফেরদৌসী রহমান (তানিয়া):আমি হাসি খুশি থাকতে সবার সাথে মিলে মিশে থাকতে আর সবাই কে আপন ভাবতেই ভালোবাসি তবে যে একবার আমার মন থেকে সরে যায় তার চার পাশেও আমি যাই না।

সিরাজুম মুনিরা:আপু নিজেকে কোন পরিচয়টি দিতে বেশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন? নৃত্যশিল্পী নাকি নৃত্যু গুরু?
ফেরদৌসী রহমান (তানিয়া):আমি এক জন সাধারন মানুষ এটাই আমার পরিচয়। তবে আমি ভালো নৃত্য গুরু নাকি ভালো নৃত্য শিল্পী এটা আমার শিক্ষার্থীরা এবং যারা আমার নৃত্য দেখেছেন তারাই  ভালো বলতে পারবেন।

Comments

Popular posts from this blog

পিরোজপুর সদরের কিছু উল্লেখযোগ্য মজাদার খাবার ও খাবারের স্থানের নাম

১.আইচ পুরি ভান্ডার এর পুরি।দামুদার ব্রীজের ঠিক এক পাশেই ছোট্ট করে এই পুরির দোকান  । অনেক জায়গায় পুরি খেলেও এটাকে আপনার বেস্ট বলতে হবে কারন ডাল পুরিতে অনেক ডাল এবং আলু পুরিতে অনেক আলু দেয়।  সন্ধ্যার পর ভরপুর গরম গরম পুরি খাওয়ার লাইন‌ লাগে এই দোকানে । প্রতিটা পুরি মাত্র ৫ টাকা। যে পরিমাণ আলু,ডাল ‌ঠুসায় সেই তুলনায় দাম কমই বলা চলে।ট্রাই করতে পারেন কোন এক সন্ধ্যায় । ২.সিও অফিস, ডাচ বাংলা বুথের পাশের চায়ের দোকানের গরুর দুধের চা। ৩.জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটে অবস্থিত ক্যাফে স্ট্রিট ফুড এর মালাই চা।পরিবেশন স্টাইল দারুন।দাম মাত্র ১৫ টাকা। ৪.দুলালের দধি ভান্ডারের রসগোল্লা, রসমালাই, দধি। ৫.ভাই ভাই মিস্টির দোকানের রসগোল্লা,দধি,রসমালাই। ৬.বেকুটিয়া ফেরিঘাটের রাস্তার পাশের ঝাল মুড়ি। ৭.পিরোজপুর পুরান বাসস্ট্যান্ডে খুলনা বাস কাউন্টারের পাশে দোকানের চিতই পিঠা।পিঠার সাথে মরিচ ভর্তা আর সরিষা ভর্তাটা জোশ লাগে। ৮.শেরে বাংলা মার্কেট এর বিপরীতে স্টার হোটেলে হট কফি। ৯.সিও অফিসের ওখানে ক্যাফে আল মদিনার চকলেট হট কফি,চকলেট কোল্ড কফি । দাম ৫০-৬০ টাকার মত লিখেছেন :জি,এম-আদল

পিরোজপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

    লিখেছেন : জি,এম-আদল পিরোজপুর বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা।প্রকৃতি তার নিজ সাজে অপরুপ সৌন্দর্যে পিরোজপুর জেলাকে সাজিয়েছেন। নদীবিধৌত জেলা পিরোজপুরে রয়েছে সেরা কিছু দর্শনীয় স্থান।পিরোজপুর সদর, ইন্দুরকানি, নাজিরপুর, কাউখালী, ভান্ডারিয়া, মঠবাড়ীয়া, নেছারাবাদ এই সাতটি উপজেলা নিয়ে পিরোজপুর জেলা গঠিত। এই উপজেলাগুলোর প্রায় প্রতিটি উপজেলারই রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য, রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান।সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে ভাসমান পেয়ারা হাট, কবি আহসান হাবিব এর পৈত্রিক ভিটা,রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ি,হরিনপালা রিভারভিউ ইকো পার্ক, ভান্ডারিয়া শিশু পার্ক,ভান্ডারিয়া মিয়া বাড়ি মসজিদ,মঠবাড়িয়ার মমিন মসজিদ, পিরোজপুর এর ডিসি পার্ক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।  ভাসমান পেয়ারা হাট : পিরোজপুর জেলার স্বরুপকাঠি উপজেলার আটঘর,কুরিয়ানা নামক জায়গায়  নৌকায় করে এই (Floating Market) ভাসমান পেয়ারা হাট বসে। কবি আহসান হাবিব এর পৈত্রিক ভিটা: কবি আহসান হাবীব একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলা ভাষার অন্যতম একজন খ্যাতনামা কবি।  আহসান হাবীব এর জন্ম ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি,পিরোজপুর সদর উপজেলার শংকরপাশা গ্রামে

পিরোজপুর জেলা নামকরণের ইতিহাস

পৃথিবী সৃষ্টির পিছনে যেমন ইতিহাস রয়েছে ঠিক তেমনি পৃথিবীর প্রতিটি দেশ,বিভাগ,জেলা ও এলাকা সৃষ্টির পিছনে রয়েছে হাজারো গল্প ও ইতিহাস। তেমনি পিরোজপুর জেলা সৃষ্টি ও নামকরণের পিছনেও রয়েছে নানা গল্প ও ইতিহাস। গবেষকদের মতে,আজকের এ পিরোজপুর সুলতানি আমলে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ অঞ্চল পরিচিতি ছিল ফিরোজপুর নামে। মোগল সম্রাট শাহসূজার অকাল প্রয়াত পুত্র ফিরোজশাহের নামে 'ফিরোজপুর' এবং পরে অপভ্রংশ হিসেবে 'পিরোজপুর' নামকরণ হয়েছে। নাজিরপুর উপজেলার শাখারী কাঠির জনৈক হেলালউদ্দীন মোঘল নিজেকে মোঘল বংশের শেষ বংশধর হিসেবে দাবী করেছিলেন। তাঁর মতে বাংলার সুবেদার শাহ্ সুজা আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার নিকট পরাজিত হয়ে বাংলার দক্ষিণ অঞ্চলে এসেছিলেন এবং আত্মগোপনের এক পর্যায় নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীর পারে একটি কেল্লা তৈরি করে কিছুকাল অবস্থান করেন। মীর জুমলার বাহিনী এখানেও হানা দেয় এবং শাহ্ সুজা তার দুই কন্যাসহ আরাকানে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি অপর এক রাজার চক্রান্তে নিহত হন। পালিয়ে যাওয়ার সময় তার স্ত্রী  এক শিশু পুত্রসহ থেকে যায়। পরবর্তীতে তারা অবস্থান পরিবর্তন করে ধীরে