Skip to main content

আমাদের শেফ হাবিব : পিরোজপুর

শেফ আহসান হাবিব
আহসান হাবিব পিরোজপুর জেলারই সন্তান। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শেফ হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি শেফদের সংগঠন "বাংলাদেশ শেফ অ্যাসোসিয়েশন" এর প্রতিস্ঠাতা এবং বর্তমান  সভাপতি।
অনেক পথ পেরিয়ে হাবিবের শেফ হিসেবে আজকের অবস্থান। এ সুদীর্ঘ পথচলায় রয়েছে নানা অভিজ্ঞতা।জেলা ওয়েবসাইট amarpirojpur.com এর মূল উদ্যোক্তা এবং  সহ-প্রতিষ্ঠাতা  জি,এম-আদল এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে শেফ হাবিব জানান তার শেফ হয়ে ওঠার  গল্প,তার হাতে গড়া সংগঠন "বাংলাদেশ শেফ এসোসিয়েশন" নিয়ে নানা স্বপ্নের কথা।
শেফ আহসান হাবিব ও তার সহকর্মীগন


জি,এম-আদল: আপনার শৈশব জীবন সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?
আহসান হাবিব: আমি পিরোজপুরের সন্তান।এই পিরোজপুরের আলো বাতাসেই আমার বেড়ে ওঠা।পিরোজপুরের টাউন স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছি।শৈশব কৈশোরের অনেক স্মৃতিই পিরোজপুরে রয়েছে।

জি,এম-আদল:শেফ পেশার প্রতি আগ্রহ কিভাবে?
আহসান হাবিব: মজার ব্যাপার হচ্ছে আমার এই পেশায় আসা কোন পূর্ব পরিকল্পনা  থেকে হয়নি। আমার এক বন্ধুর চাচা শেফ ছিল তার হাত ধরেই হঠাৎ এই সেক্টরে আসা,আমি যখন এই পেশায় এসেছি তখন এটাকে কেউ তেমন ভাল চাকরি বা পেশা ভাবতোই না।

জি,এম-আদল:এখন অবধি কত কতগুলো  প্রতিস্ঠানে শেফ হিসেবে চাকরি করেছেন?
আহসান হাবিব: প্রায় ২০ টার কাছাকাছি হবে। তার মধ্যে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, আলফা গ্রুপ, খান কিচেন, হোটেল অরনেট,হোটেল জাকারিয়া অন্যতম।

জি,এম-আদল:এই পেশায় আয় কেমন?
আহসান হাবিব: আয় ভাল, খারাপ না।প্রতিষ্ঠান, কাজ ও অভিজ্ঞতাভেদে বেতন কাঠামোতে পার্থক্য হয়। চাকরির শুরুতে একজন শেফের বেতন কিছুটা কম হলেও অভিজ্ঞতার সাথে সাথে আয়ও বাড়তে থাকে।অভিজ্ঞদের বেতন গড়ে ৩০থেকে ৫০ হাজার টাকা, একজন অভিজ্ঞ সেফ লাখ টাকাও আয় করে।মূলত এ পেশায় কাজের ধরন বুঝে পর্যাপ্ত বেতন ও ভাতা দেয়া হয়।বেতনের চেয়ে বড় কথা এ পেশাটা উপভোগ্য পেশা। চ্যালেঞ্জিং একটা পেশা।

জি,এম-আদল:কতটুকু শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন এই পেশায়?
আহসান হাবিব: এইচএসসি পাস করার পর হোটেল ম্যানেজমেন্টের ওপর অনার্স কোর্স করে এই পেশায় আসা যায়। তাছাড়া ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশনের ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেও এই পেশায় আসা যায়। ইংরেজি ভাষার উপরে ভালো দক্ষতা থাকলে এই পেশায় সহজেই সফল হওয়া সম্ভব। আপনি এসএসসি বা এইচএসসির পরেই যেকোনো শেফ কোর্স করে শেফ হিসেবে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।

জি,এম-আদল:শেফ হওয়ার প্রশিক্ষণ কোথা থেকে নেয়া যায়?
আহসান হাবিব: হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্সের একটি অংশ হচ্ছে শেফ বা কুক। এছাড়াও ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন কোর্স অবশ্যই সম্পন্ন করতে হবে। এই কোর্স থেকে আপনি বাংলাদেশি, চায়নিজ, ইটালিয়ান, ইউরোপিয়ান ও ইন্ডিয়ান খাবার তৈরির প্রণালী, ডেকোরেশন, হাইজিন এবং স্যানিটেশন সম্পর্কে জানতে পারবেন। কোর্সগুলো দুই মাস, ছয় মাস ও এক বছর মেয়াদী হয়ে থাকে। এছাড়াও প্রফেশনাল শেফ কোর্স নামের ডিপ্লোমা কোর্সটি করেও নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারবেন।
তাছাড়া বর্তমানে বেসরকারিভাবে অনেক রেস্টুরেন্ট ও প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের শেফ কোর্স করাচ্ছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় শেফের কোর্স করতে পারবেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইন্সটিটিউট (মহাখালী), বাংলাদেশ হোটেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইন্সটিটিউট (গ্রিনরোড), ইন্সটিটিউট অব ট্যুরিজম অ্যান্ড হোটেল ম্যানেজমেন্ট (ধানমণ্ডি), বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট (ধানমণ্ডি),  রাজমণি ঈশা খাঁ হোটেল ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং কোর্স (কাকরাইল) ইত্যাদি।আমিও এ বিষয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছি,কোর্স করেছি।তার মধ্যে
ফুড ক্রেডিট , ইন্টারন্যাশনাল  ট্রেনিং ইনস্টিটিউট অফ কুলিনারি আটর্স উল্লেখযোগ্য।

জি,এম-আদল:এ পেশায় মনে রাখার মত ভাল কোন স্মৃতি মনে পড়ে?
আহসান হাবিব: একবার আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমার রান্না খাওয়ানোর সুযোগ হয়েছিল।এটি পেশা জীবনে একটি ভাল লাগার মত স্মৃতি।

জি,এম-আদল: এ পেশায় আপনার সবচেয়ে বড় অর্জন কি?
আহসান হাবিব: অনেকে যখন আমার রান্না খেয়ে প্রশংসা করে তখন মন ভরে যায়।এই সেক্টরে কর্মরত লাখ মানুষের  ভালবাসা এটাই আমার বড় পুরস্কার।এই যে আমি  শেফ ইউনিট এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি।এখানে যে সম্মান, ভালবাসা পাচ্ছি এটাই আমার বড় প্রাপ্তি।
শেফ আহসান হাবিব ও তার সহকর্মীগন

জি,এম-আদল:বাসায় কি রান্না করা  হয়?
আহসান হাবিব: একদমই না, আমরা  শেফরা বাসায় তেমন রান্না করিই না।

জি,এম-আদল:আপনি তো বাংলাদেশ সেফ এসোসিয়েশন এর সভাপতি? এ সংগঠন সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?
আহসান হাবিব: আসলে বাংলাদেশে সব পেশার মানুষের  ইউনিটি বা এসোসিয়েশন থাকলেও শেফদের তা ছিলনা, আমি সেটা প্রতিষ্ঠা করেছি।এর মধ্যে দিয়ে আমরা এখন  আমাদের অধিকার আদায় করতে পারি, আমরা অসহায় শেফদের পাশে দাড়াতে পারি, কর্মহীনদের কাজের ব্যবস্হা করতে পারি।সুখ-দুঃখ শেয়ার করতে পারি, বিপদে আপদে একজন আরেকজনের হেল্প করতে পারি।

জি,এম-আদল:পিরোজপুর জেলার তরুন যারা এ পেশায় আসতে চায় তাদের ব্যাপারে আপনার কি পরামর্শ?
 আহসান হাবিব: এই পেশায় আসতে হলে অবশ্যই পরিশ্রম করার চিন্তা করে আসতে হবে প্রথম অনেক হার্ড ওয়ার্ক  করতে হবে, এই পেশাকে সন্মান করতে হবে, পরিশেষে এই কাজটাকে মনে প্রানে ভালবাসতে হবে।বর্তমানে বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলাতেই গড়ে উঠছে আন্তর্জাতিক মানের হোটেল, মোটেল ও ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্ট। একই সঙ্গে বাড়ছে দক্ষ শেফের চাহিদা। তাছাড়া বাংলাদেশী খাবার সবসময়ই বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে অনেক জনপ্রিয়। এছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশী শেফরা দেশি, বিদেশি, চাইনিজ ও ইন্ডিয়ানসহ বিভিন্ন দেশের খাবার রান্না করা শিখে দেশের বাইরেও কাজ করছেন। আর সেসব দেশে বাংলাদেশি কুক বা শেফদের চাহিদাও রয়েছে। একজন শেফ বিভিন্ন হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ছাড়াও চাকরি পেতে পারেন বিভিন্ন এয়ার লাইন্স কোম্পানি, ট্যুর ও ট্রাভেল এজেন্সির কুক বিভাগে।

জি,এম-আদল:একজন শেফ হিসেবে এই সেক্টর নিয়ে আপনি ভবিষ্যৎ কি স্বপ্ন দেখেন?
আহসান হাবিব: শেফ  একটি বড় মাপের শিল্প এবং সেবামূলক কাজ। আমার স্বপ্ন এই শেফ পেশা আরো  সন্মানজনক জায়গায় পৌঁছাবে যেমনটা সন্মান অন্য  পেশাকে করা হয়।আমি মনে করি অন্য পেশার এর মত একজন শেফও অনেক সন্মান পেতে পারে।

Comments

Popular posts from this blog

পিরোজপুর সদরের কিছু উল্লেখযোগ্য মজাদার খাবার ও খাবারের স্থানের নাম

১.আইচ পুরি ভান্ডার এর পুরি।দামুদার ব্রীজের ঠিক এক পাশেই ছোট্ট করে এই পুরির দোকান  । অনেক জায়গায় পুরি খেলেও এটাকে আপনার বেস্ট বলতে হবে কারন ডাল পুরিতে অনেক ডাল এবং আলু পুরিতে অনেক আলু দেয়।  সন্ধ্যার পর ভরপুর গরম গরম পুরি খাওয়ার লাইন‌ লাগে এই দোকানে । প্রতিটা পুরি মাত্র ৫ টাকা। যে পরিমাণ আলু,ডাল ‌ঠুসায় সেই তুলনায় দাম কমই বলা চলে।ট্রাই করতে পারেন কোন এক সন্ধ্যায় । ২.সিও অফিস, ডাচ বাংলা বুথের পাশের চায়ের দোকানের গরুর দুধের চা। ৩.জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটে অবস্থিত ক্যাফে স্ট্রিট ফুড এর মালাই চা।পরিবেশন স্টাইল দারুন।দাম মাত্র ১৫ টাকা। ৪.দুলালের দধি ভান্ডারের রসগোল্লা, রসমালাই, দধি। ৫.ভাই ভাই মিস্টির দোকানের রসগোল্লা,দধি,রসমালাই। ৬.বেকুটিয়া ফেরিঘাটের রাস্তার পাশের ঝাল মুড়ি। ৭.পিরোজপুর পুরান বাসস্ট্যান্ডে খুলনা বাস কাউন্টারের পাশে দোকানের চিতই পিঠা।পিঠার সাথে মরিচ ভর্তা আর সরিষা ভর্তাটা জোশ লাগে। ৮.শেরে বাংলা মার্কেট এর বিপরীতে স্টার হোটেলে হট কফি। ৯.সিও অফিসের ওখানে ক্যাফে আল মদিনার চকলেট হট কফি,চকলেট কোল্ড কফি । দাম ৫০-৬০ টাকার মত লিখেছেন :জি,এম-আদল

পিরোজপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

    লিখেছেন : জি,এম-আদল পিরোজপুর বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা।প্রকৃতি তার নিজ সাজে অপরুপ সৌন্দর্যে পিরোজপুর জেলাকে সাজিয়েছেন। নদীবিধৌত জেলা পিরোজপুরে রয়েছে সেরা কিছু দর্শনীয় স্থান।পিরোজপুর সদর, ইন্দুরকানি, নাজিরপুর, কাউখালী, ভান্ডারিয়া, মঠবাড়ীয়া, নেছারাবাদ এই সাতটি উপজেলা নিয়ে পিরোজপুর জেলা গঠিত। এই উপজেলাগুলোর প্রায় প্রতিটি উপজেলারই রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য, রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান।সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে ভাসমান পেয়ারা হাট, কবি আহসান হাবিব এর পৈত্রিক ভিটা,রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ি,হরিনপালা রিভারভিউ ইকো পার্ক, ভান্ডারিয়া শিশু পার্ক,ভান্ডারিয়া মিয়া বাড়ি মসজিদ,মঠবাড়িয়ার মমিন মসজিদ, পিরোজপুর এর ডিসি পার্ক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।  ভাসমান পেয়ারা হাট : পিরোজপুর জেলার স্বরুপকাঠি উপজেলার আটঘর,কুরিয়ানা নামক জায়গায়  নৌকায় করে এই (Floating Market) ভাসমান পেয়ারা হাট বসে। কবি আহসান হাবিব এর পৈত্রিক ভিটা: কবি আহসান হাবীব একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলা ভাষার অন্যতম একজন খ্যাতনামা কবি।  আহসান হাবীব এর জন্ম ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি,পিরোজপুর সদর উপজেলার শংকরপাশা গ্রামে

পিরোজপুর জেলা নামকরণের ইতিহাস

পৃথিবী সৃষ্টির পিছনে যেমন ইতিহাস রয়েছে ঠিক তেমনি পৃথিবীর প্রতিটি দেশ,বিভাগ,জেলা ও এলাকা সৃষ্টির পিছনে রয়েছে হাজারো গল্প ও ইতিহাস। তেমনি পিরোজপুর জেলা সৃষ্টি ও নামকরণের পিছনেও রয়েছে নানা গল্প ও ইতিহাস। গবেষকদের মতে,আজকের এ পিরোজপুর সুলতানি আমলে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ অঞ্চল পরিচিতি ছিল ফিরোজপুর নামে। মোগল সম্রাট শাহসূজার অকাল প্রয়াত পুত্র ফিরোজশাহের নামে 'ফিরোজপুর' এবং পরে অপভ্রংশ হিসেবে 'পিরোজপুর' নামকরণ হয়েছে। নাজিরপুর উপজেলার শাখারী কাঠির জনৈক হেলালউদ্দীন মোঘল নিজেকে মোঘল বংশের শেষ বংশধর হিসেবে দাবী করেছিলেন। তাঁর মতে বাংলার সুবেদার শাহ্ সুজা আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার নিকট পরাজিত হয়ে বাংলার দক্ষিণ অঞ্চলে এসেছিলেন এবং আত্মগোপনের এক পর্যায় নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীর পারে একটি কেল্লা তৈরি করে কিছুকাল অবস্থান করেন। মীর জুমলার বাহিনী এখানেও হানা দেয় এবং শাহ্ সুজা তার দুই কন্যাসহ আরাকানে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি অপর এক রাজার চক্রান্তে নিহত হন। পালিয়ে যাওয়ার সময় তার স্ত্রী  এক শিশু পুত্রসহ থেকে যায়। পরবর্তীতে তারা অবস্থান পরিবর্তন করে ধীরে