Skip to main content

সাহসী ফায়ারম্যান আশিক : পিরোজপুর

লিখেছেন: জি,এম-আদল 

শুনেছি জেনে শুনে নাকি কেউ আগুনে ঝাপ দেয় না কিন্তু কথাটি ভুল।জেনে শুনে কেউ কেউ আগুনে ঝাপ দেয়।বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ম্যানরা প্রায়ই জেনে শুনে মানুষকে বাঁচাতে আগুনে ঝাপ দেয়।তেমনি একজন ফায়ারম্যান আশিক আহম্মেদ।

আশিক ২০১৪ সালে চাকরিতে যোগদান করেন।
চাকরিতে যোগদানের কিছু দিনের মধ্যেই সাহসী অনেক আপারেশনে যোগদানের সুযোগ পায় আশিক।পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়ার তুষখালীর সন্তান আশিকের কাছে এ সকল অভিজ্ঞতার জানতে চাইলে জেলা ব্রান্ডিং ওয়েবসাইট amarpirojpur.com কে আশিক জানান,"শুরুতেই অধিদপ্তর থেকে দেশের সেবা করার সুযোগ হয়। ২০১৫ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন  নির্বাচনের কিছুদিন পূর্বে খিলগাঁও ঝিলের মাঝখানে দ্বোতলা টিনসেট ঘড়ের একতলা পানির নিচে ডুবে যায় এমন সংবাদ পেয়ে আমরা উদ্ধারকাজে ছুটে যাই সেখানে, দ্বিতীয় তলার হাটু পর্যন্ত পানির নিচে তলানো ছিলো অনেক গুলো ছোট ছোট রুম তার মধ্যে আবার হাটু পর্যন্ত পানি, প্রতিটা রুমের পাটাতন কেটে কেটে উদ্ধার কাজ করা হয়। একে একে অনেক গুলো লাশ পানির নিচ থেকে উঠানো হয়, তাদের শরীর তখনো গরম ছিলো মনে হচ্ছিল তারা বেচে আছে, চোখের পানি ধরে রাখা কোন ভাবে সম্ভব ছিলো না তখন।

এর পরে ২০১৬ সালে বরিশাল সদর চাকরি করার সুযোগ হয়।২০১৬ সালের রমজানের শেষ দিকে বরিশাল চারমোনাই ঘাট সংলগ্ন এলাকায় লঞ্চ ও রকেটের সাথে সংঘর্ষ হয় এমন সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি রকেট পি.এস.মাহ্সুদ এর সামনের একপাশের তিনটি কেবিন দুমরে মুচরে আছে। তখন আমাদের সাথে  উদ্ধার কাজে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলেন  তৎকালীন  জেলা প্রশাসক,বরিশাল মহোদয়। অনেক আহত ব্যাক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়, কেবিনের আটকে পরা মৃত্য ব্যাক্তিদের অনেক কষ্ট করে লোহার পাত কেটে, ফাকা করে  একে একে ৫ জনকে বের করা হয়। একটি কেবিন থেকে তিন জনকে উদ্ধার করা হয় তার মধ্যে ২ জন মৃত, অন্যজন একটি মেয়ে জীবিত ছিলো তার এক পা আটকে ছিলো, তার শুধু এতোটুকু আকুতি ছিলো ভাই আমি কি বাচবো, দরকার হলে আমার পা কেটে ফেলেন তবুও আমায় বাচান, তাকে আমরা উৎসাহ দেই এবং দ্রুত সময় লোহার পাতগুলো কেটে মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়, মেয়েটিকে যখন হাত দিয়ে  আমি কোলে করে উপরে তুলি তখন চোখের পানি চলে আসে কারন আমার হাতটা যখন তার পায়ে লাগে তখন উপলব্ধি করতে পারি তার পা খানা অনেক খানি কেটে গেছে, তাও আবার তিন-চার জায়গায় গায় শুধু চামরা আর মাংসে বেজে আছে, সাথে সাথে আমার সহকর্মীরা  বুঝতে পেরে তারাও আমার সাথে তার পা খানা ধরে, মেয়েটি আমার চোখে পানি দেখে বলে ভাইয়া আমি কি বাচবো, আমি তাকে বলি আপনার কিছু হবে না আল্লাহ ভরষা, পরে শুনতে  পাই হাসপাতালে তার এক পা কেটে ফেলছে হয়েছে তবে সে ভালো আছেন কোন সমস্যা নেই, তখন নিজের কাছে অনেক ভালো লেগেছিল । "

উক্ত অপারেশনে জেলা প্রশাসক বরিশাল মহোদয় আশিকের কাজে খুশি হয়ে ২০১৭ সালের সাহসী সেবা পদকে মনোনিত করেন। ২০১৭ সালের বরিশাল জেলা থেকে ১১ জনকে "সাহসী সেবা পদক ২০১৭" সম্মাননা দেয়া হয় এর মধ্যে ইউনিফর্ম পরিহিতদের মধ্যে পুলিশ থেকে পান একজন এডিশনাল এসপি এবং ফায়ার সার্ভিস থেকে আশিক সম্মাননাটি পায়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে আবার বিভিন্ন আগুন দূর্ঘটনার সাহসী ভুমিকা রাখায় বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস থেকে দেশের  সর্বোচ্চ সম্মাননা ফায়ার সার্ভিস এন্ড  সিভিল ডিফেন্স সেবা পদক ২০১৭   মনোনীত হয় আশিক। ২০১৭ সালে এই সম্মাননা এর জন্য  সারা বাংলাদেশ থেকে ৫০ জন মনোনীত করা হয় তার মধ্যে বরিশাল বিভাগ থেকে শুধুমাত্র আশীককেই মনোনীত করা হয়।
২০১৮ সালে বুনিয়াদি  প্রশিক্ষক হিসেবে ৫৫ এবং ৫৬ ব্যাচের ট্রেনিং করানোর সুযোগও পায়  সাহসী এই ফায়ারম্যান আশিক আহম্মেদ।


Comments

Popular posts from this blog

পিরোজপুর সদরের কিছু উল্লেখযোগ্য মজাদার খাবার ও খাবারের স্থানের নাম

১.আইচ পুরি ভান্ডার এর পুরি।দামুদার ব্রীজের ঠিক এক পাশেই ছোট্ট করে এই পুরির দোকান  । অনেক জায়গায় পুরি খেলেও এটাকে আপনার বেস্ট বলতে হবে কারন ডাল পুরিতে অনেক ডাল এবং আলু পুরিতে অনেক আলু দেয়।  সন্ধ্যার পর ভরপুর গরম গরম পুরি খাওয়ার লাইন‌ লাগে এই দোকানে । প্রতিটা পুরি মাত্র ৫ টাকা। যে পরিমাণ আলু,ডাল ‌ঠুসায় সেই তুলনায় দাম কমই বলা চলে।ট্রাই করতে পারেন কোন এক সন্ধ্যায় । ২.সিও অফিস, ডাচ বাংলা বুথের পাশের চায়ের দোকানের গরুর দুধের চা। ৩.জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটে অবস্থিত ক্যাফে স্ট্রিট ফুড এর মালাই চা।পরিবেশন স্টাইল দারুন।দাম মাত্র ১৫ টাকা। ৪.দুলালের দধি ভান্ডারের রসগোল্লা, রসমালাই, দধি। ৫.ভাই ভাই মিস্টির দোকানের রসগোল্লা,দধি,রসমালাই। ৬.বেকুটিয়া ফেরিঘাটের রাস্তার পাশের ঝাল মুড়ি। ৭.পিরোজপুর পুরান বাসস্ট্যান্ডে খুলনা বাস কাউন্টারের পাশে দোকানের চিতই পিঠা।পিঠার সাথে মরিচ ভর্তা আর সরিষা ভর্তাটা জোশ লাগে। ৮.শেরে বাংলা মার্কেট এর বিপরীতে স্টার হোটেলে হট কফি। ৯.সিও অফিসের ওখানে ক্যাফে আল মদিনার চকলেট হট কফি,চকলেট কোল্ড কফি । দাম ৫০-৬০ টাকার মত লিখেছেন :জি,এম-আদল

পিরোজপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

    লিখেছেন : জি,এম-আদল পিরোজপুর বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা।প্রকৃতি তার নিজ সাজে অপরুপ সৌন্দর্যে পিরোজপুর জেলাকে সাজিয়েছেন। নদীবিধৌত জেলা পিরোজপুরে রয়েছে সেরা কিছু দর্শনীয় স্থান।পিরোজপুর সদর, ইন্দুরকানি, নাজিরপুর, কাউখালী, ভান্ডারিয়া, মঠবাড়ীয়া, নেছারাবাদ এই সাতটি উপজেলা নিয়ে পিরোজপুর জেলা গঠিত। এই উপজেলাগুলোর প্রায় প্রতিটি উপজেলারই রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য, রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান।সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে ভাসমান পেয়ারা হাট, কবি আহসান হাবিব এর পৈত্রিক ভিটা,রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ি,হরিনপালা রিভারভিউ ইকো পার্ক, ভান্ডারিয়া শিশু পার্ক,ভান্ডারিয়া মিয়া বাড়ি মসজিদ,মঠবাড়িয়ার মমিন মসজিদ, পিরোজপুর এর ডিসি পার্ক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।  ভাসমান পেয়ারা হাট : পিরোজপুর জেলার স্বরুপকাঠি উপজেলার আটঘর,কুরিয়ানা নামক জায়গায়  নৌকায় করে এই (Floating Market) ভাসমান পেয়ারা হাট বসে। কবি আহসান হাবিব এর পৈত্রিক ভিটা: কবি আহসান হাবীব একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলা ভাষার অন্যতম একজন খ্যাতনামা কবি।  আহসান হাবীব এর জন্ম ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি,পিরোজপুর সদর উপজেলার শংকরপাশা গ্রামে

পিরোজপুর জেলা নামকরণের ইতিহাস

পৃথিবী সৃষ্টির পিছনে যেমন ইতিহাস রয়েছে ঠিক তেমনি পৃথিবীর প্রতিটি দেশ,বিভাগ,জেলা ও এলাকা সৃষ্টির পিছনে রয়েছে হাজারো গল্প ও ইতিহাস। তেমনি পিরোজপুর জেলা সৃষ্টি ও নামকরণের পিছনেও রয়েছে নানা গল্প ও ইতিহাস। গবেষকদের মতে,আজকের এ পিরোজপুর সুলতানি আমলে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ অঞ্চল পরিচিতি ছিল ফিরোজপুর নামে। মোগল সম্রাট শাহসূজার অকাল প্রয়াত পুত্র ফিরোজশাহের নামে 'ফিরোজপুর' এবং পরে অপভ্রংশ হিসেবে 'পিরোজপুর' নামকরণ হয়েছে। নাজিরপুর উপজেলার শাখারী কাঠির জনৈক হেলালউদ্দীন মোঘল নিজেকে মোঘল বংশের শেষ বংশধর হিসেবে দাবী করেছিলেন। তাঁর মতে বাংলার সুবেদার শাহ্ সুজা আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার নিকট পরাজিত হয়ে বাংলার দক্ষিণ অঞ্চলে এসেছিলেন এবং আত্মগোপনের এক পর্যায় নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীর পারে একটি কেল্লা তৈরি করে কিছুকাল অবস্থান করেন। মীর জুমলার বাহিনী এখানেও হানা দেয় এবং শাহ্ সুজা তার দুই কন্যাসহ আরাকানে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি অপর এক রাজার চক্রান্তে নিহত হন। পালিয়ে যাওয়ার সময় তার স্ত্রী  এক শিশু পুত্রসহ থেকে যায়। পরবর্তীতে তারা অবস্থান পরিবর্তন করে ধীরে