Skip to main content

পিরোজপুরের স্কুটি কন্যা চন্দ্রিকা

লিখেছেন:জি,এম-আদল 

চন্দ্রিকা মন্ডল

প্রবাদ আছে --'যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে'। স্কুটি কন্যা চন্দ্রিকার ক্ষেত্রে  নতুন ভাবে বলা যেতেই পারে--যে রাঁধে সে স্কুটিও চালায়।
নারী আজ আবদ্ধ খাঁচা ভাঙতে শিখেছেন। সমাজের প্রচলিত ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে স্বাধীনভাবে পথ চলছেন। নারীর পরাধীনতার চার দেয়াল ভেঙে  দিয়েছে তার অসীম আত্মবিশ্বাস। নারীর পথচলায় গতি ফেরাতে অনুকরণীয় হয়েছেন অনেকই। কেউ নৃত্যে মঞ্চ মাতাচ্ছেন, কেউ বা গবেষণাগারে মহামারির ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করছেন,কেউবা মহাকাশে পাড়ি জমাচ্ছেন আবার কেউবা স্কুটি চালিয়ে রাজপথ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এই দৃশ্যমান পথচলায় আসে অনেক বাধা, শুনতে হয় অনেকের কথা। চন্দ্রিকার মতে,  "অধিকার কেউ দিয়ে দেয় না, নিজের অধিকার নিজেকেই আদায় করে নিতে হয়।" কথাগুলো বলছিলেন বহুগুনে গুনান্বিত পিরোজপুর জেলার নাজিরপুরের মেয়ে চন্দ্রিকা মন্ডল। 
২০১২ সালে নাজিরপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে 
এস.এস.সি এবং ২০১৪ সালে নাজিরপুর শহীদ জিয়া কলেজ থেকে  এইচ.এস.সি পাস করে বর্তমানে  পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী  কলেজে বাংলা বিভাগে  অনার্স  শেষ বর্ষে  পড়ছেন। বিভিন্ন ভাবে মেলে ধরেছেন নিজের প্রতিভাকে।প্রতিভা বিকাশের মাধ্যমে হয়ে উঠেছে সবার প্রিয় মুখ।নানা অঙ্গনে প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়েছেন চন্দ্রিকা।তিনি যেমন চালান স্কুটি,তেমনি নিপুন হাতে আঁকেন ছবি,মাঝে মাঝে কবিতা আবৃতিও করে থাকেন।
এত গুণ কিভাবে অর্জন করলেন জানতে চাইলে  
চন্দ্রিকা বলেন, "ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল বাইক চালানো শেখার,সাইকেল চালাতে পারতাম। আমার একটা বন্ধু ছিলো মিঠুন মজুমদার, ওকে মনের ইচ্ছাটা বললাম যে, আমার বাইক চালাতে ইচ্ছে করে,পরে ওই মূলত আমাকে ফাস্ট বাইক চালানো শিখায়।
যখন স্কুটি বা বাইক  চালাই, কত লোকে কত কিছু বলে,মেয়ে হয়ে বাইক চালানোটা কিছু কিছু লোক  স্বাভাবিক ভাবে দেখে না, অনেকে খারাপ মন্তব্য করেন, বেশিরভাগ লোক তাকিয়ে থাকে। অনেক অনেক ছেলেরা বলে আপু আমাদের একটু নিয়ে যান।  মুরুব্বিরা বলে মেয়েটার কি সাহস।তবে ভাল লাগার ব্যাপার হচ্ছে, অনেকে আবার উৎসহও দিয়ে থাকে।অনেক মেয়েরা আমাকে দেখে উৎসাহ পায়। অনেক মেয়েরা আমার কাছে চালানো শিখতে চায়।
মা হচ্ছে আমার বড় শক্তি,মা আমাকে সব ভাল কাজে সাপোর্ট করে।
চন্দ্রিকা মন্ডলের আঁকা ছবি

ছবি আঁকার প্রতিভার গল্প করতে গিয়ে স্কুটি কন্যা চন্দ্রিকা আরো বলেন,আমার বাবা একজন আর্টিস্ট ছিলেন,তিনি ছবি আঁকতেন এবং লিখতেন।সে যখন মারা গেছে তখন আমার এক বছর বয়স ছিল, তখন বোঝার মত বয়স আমার হয়নি, তারপর থেকে নিজের প্রচেষ্টায় শেখা বলতে পারেন ছবি আঁকার ক্ষেত্রে বাবাই আমার অনুপ্রেরণা।আমার আর্ট কলেজে পড়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু সামর্থ্য আর একা একা হয়ে ওঠেনি।আমার জীবনে মাই হচ্ছে সব।মা ই বাবা, মা ই মা।মা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি।"
শিশুদের সাথে চন্দ্রিকা মন্ডল

চন্দ্রিকার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন সমস্ত কিছু তার মা ও দেশের মানুষকে নিয়ে।স্বাবলম্বী হয়ে মায়ের পাশে দাঁড়াতে চায় এই স্কুটি বালিকা।তার ইচ্ছে একজন শিক্ষিকা হওয়ার।মেয়েদের বাইক চালানো শিখানো নিয়ে তিনি  একটি প্রাতিষ্ঠানিক গ্রুপ করতে চায়।পাশাপাশি দেশের অসহায় দরিদ্র পথশিশুদের জন্য ভাল কিছু  করার ইচ্ছা আছে চন্দ্রিকা নামের এই স্কুটি কন্যার।

Comments

Popular posts from this blog

পিরোজপুর সদরের কিছু উল্লেখযোগ্য মজাদার খাবার ও খাবারের স্থানের নাম

১.আইচ পুরি ভান্ডার এর পুরি।দামুদার ব্রীজের ঠিক এক পাশেই ছোট্ট করে এই পুরির দোকান  । অনেক জায়গায় পুরি খেলেও এটাকে আপনার বেস্ট বলতে হবে কারন ডাল পুরিতে অনেক ডাল এবং আলু পুরিতে অনেক আলু দেয়।  সন্ধ্যার পর ভরপুর গরম গরম পুরি খাওয়ার লাইন‌ লাগে এই দোকানে । প্রতিটা পুরি মাত্র ৫ টাকা। যে পরিমাণ আলু,ডাল ‌ঠুসায় সেই তুলনায় দাম কমই বলা চলে।ট্রাই করতে পারেন কোন এক সন্ধ্যায় । ২.সিও অফিস, ডাচ বাংলা বুথের পাশের চায়ের দোকানের গরুর দুধের চা। ৩.জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটে অবস্থিত ক্যাফে স্ট্রিট ফুড এর মালাই চা।পরিবেশন স্টাইল দারুন।দাম মাত্র ১৫ টাকা। ৪.দুলালের দধি ভান্ডারের রসগোল্লা, রসমালাই, দধি। ৫.ভাই ভাই মিস্টির দোকানের রসগোল্লা,দধি,রসমালাই। ৬.বেকুটিয়া ফেরিঘাটের রাস্তার পাশের ঝাল মুড়ি। ৭.পিরোজপুর পুরান বাসস্ট্যান্ডে খুলনা বাস কাউন্টারের পাশে দোকানের চিতই পিঠা।পিঠার সাথে মরিচ ভর্তা আর সরিষা ভর্তাটা জোশ লাগে। ৮.শেরে বাংলা মার্কেট এর বিপরীতে স্টার হোটেলে হট কফি। ৯.সিও অফিসের ওখানে ক্যাফে আল মদিনার চকলেট হট কফি,চকলেট কোল্ড কফি । দাম ৫০-৬০ টাকার মত লিখেছেন :জি,এম-আদল

পিরোজপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

    লিখেছেন : জি,এম-আদল পিরোজপুর বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা।প্রকৃতি তার নিজ সাজে অপরুপ সৌন্দর্যে পিরোজপুর জেলাকে সাজিয়েছেন। নদীবিধৌত জেলা পিরোজপুরে রয়েছে সেরা কিছু দর্শনীয় স্থান।পিরোজপুর সদর, ইন্দুরকানি, নাজিরপুর, কাউখালী, ভান্ডারিয়া, মঠবাড়ীয়া, নেছারাবাদ এই সাতটি উপজেলা নিয়ে পিরোজপুর জেলা গঠিত। এই উপজেলাগুলোর প্রায় প্রতিটি উপজেলারই রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য, রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান।সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে ভাসমান পেয়ারা হাট, কবি আহসান হাবিব এর পৈত্রিক ভিটা,রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ি,হরিনপালা রিভারভিউ ইকো পার্ক, ভান্ডারিয়া শিশু পার্ক,ভান্ডারিয়া মিয়া বাড়ি মসজিদ,মঠবাড়িয়ার মমিন মসজিদ, পিরোজপুর এর ডিসি পার্ক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।  ভাসমান পেয়ারা হাট : পিরোজপুর জেলার স্বরুপকাঠি উপজেলার আটঘর,কুরিয়ানা নামক জায়গায়  নৌকায় করে এই (Floating Market) ভাসমান পেয়ারা হাট বসে। কবি আহসান হাবিব এর পৈত্রিক ভিটা: কবি আহসান হাবীব একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলা ভাষার অন্যতম একজন খ্যাতনামা কবি।  আহসান হাবীব এর জন্ম ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি,পিরোজপুর সদর উপজেলার শংকরপাশা গ্রামে

পিরোজপুর জেলা নামকরণের ইতিহাস

পৃথিবী সৃষ্টির পিছনে যেমন ইতিহাস রয়েছে ঠিক তেমনি পৃথিবীর প্রতিটি দেশ,বিভাগ,জেলা ও এলাকা সৃষ্টির পিছনে রয়েছে হাজারো গল্প ও ইতিহাস। তেমনি পিরোজপুর জেলা সৃষ্টি ও নামকরণের পিছনেও রয়েছে নানা গল্প ও ইতিহাস। গবেষকদের মতে,আজকের এ পিরোজপুর সুলতানি আমলে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ অঞ্চল পরিচিতি ছিল ফিরোজপুর নামে। মোগল সম্রাট শাহসূজার অকাল প্রয়াত পুত্র ফিরোজশাহের নামে 'ফিরোজপুর' এবং পরে অপভ্রংশ হিসেবে 'পিরোজপুর' নামকরণ হয়েছে। নাজিরপুর উপজেলার শাখারী কাঠির জনৈক হেলালউদ্দীন মোঘল নিজেকে মোঘল বংশের শেষ বংশধর হিসেবে দাবী করেছিলেন। তাঁর মতে বাংলার সুবেদার শাহ্ সুজা আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার নিকট পরাজিত হয়ে বাংলার দক্ষিণ অঞ্চলে এসেছিলেন এবং আত্মগোপনের এক পর্যায় নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীর পারে একটি কেল্লা তৈরি করে কিছুকাল অবস্থান করেন। মীর জুমলার বাহিনী এখানেও হানা দেয় এবং শাহ্ সুজা তার দুই কন্যাসহ আরাকানে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি অপর এক রাজার চক্রান্তে নিহত হন। পালিয়ে যাওয়ার সময় তার স্ত্রী  এক শিশু পুত্রসহ থেকে যায়। পরবর্তীতে তারা অবস্থান পরিবর্তন করে ধীরে