দূরন্ত শৈশব : তারিক রানা


লিখেছেন: তারিক রানা

হলুদ পুরোনো বিল্ডিং টি পিরোজপুর সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হোস্টেল। 
জেলা ও দায়রা জজ সাহেবের বাড়ির সামনে ই অবস্থিত এই হোস্টেল টি। 
টাউন স্কুলের ঠিক পাশ্বে যে সরু সড়কটি কালিবাড়ি র দিকে গিয়েছে, তার ডান পাশ্বে ছিল আগে কাঠের জজ সাহেবের ( পূর্বে মুন্সেফ)  বাড়ি। সেটা ভেঙ্গে নতুন বাসভবন গড়ে তোলা হয়েছে আশির দশকের মাঝামাঝিতে। 

ক্লাস নাইন বা টেন এ আমি এই হোস্টেলে বেশ কিছুদিন ছিলাম।হঠাত মাথায় এলো বোর্ড  এ স্ট্যন্ড করতে হবে। তাই নিরবিচ্ছিন্ন পড়াশুনার জন্য , হোস্টেল ই একমাত্র জায়গা, যেখানে মন দিয়ে পড়াশুনা করা যাবে।

আমার একটি ফোনিক্স সাইকেল ছিল। হোস্টেলের স্ম্রিতি ঠিক মনে নাই। খেতাম কোথায়? আমার মনে হয় , সাইকেল চালিয়ে বোধ হয় সি আই পাড়ার বাসায় চলে যেতাম। খেয়ে দেয়ে আবার হোস্টেলে।
হোস্টেলে কোন কোন স্যার রা যে ছিলেন একটু ও মনে নাই।
বড় হুজুর, মোতাহার স্যার, আনোয়ার স্যার, ওনারা থাকতে পারেন।

আর আমার বোর্ড এ মেধা তালিকায় স্থান পাবার জন্য পড়াশুনা?
সেই রকম কোনো স্ম্রিতি ই নেই।
একটা স্ম্রিতি আছে। তখন তো রাত নয়টা দশটায় অনেক রাত।
  পোষ্ট অফিস রোডে নুরুল হুদা আলম মামা ভি সি আর ভাড়া দিতেন।দিনের বেলা, ওনার বাসায় ও শো চলতো ,  তাও আবার , হাউজফুল। আলম মামা নাকি অন্য কোথাও থেকে ভিসিয়ার ভাড়া নিয়েছি, সেটা মনে নেই।

এতোটুকু মনে আছে, হোস্টেলের পাশ্বেই থাকতেন ( এখনো আছেন ) দেবু দা। Debasish Guha    উনি খেলাঘর এর সংগঠক ছিলেন। এখন প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক।
আমি কোনো ভাবে হয়তো, হোস্টেলের কিছু ছাত্রকে মোটিভেট করতে পেরেছিলাম, ভাড়ায় ভিসি আর এনে রুমে রাতজেগে দেখা।
আদৌ কি ভিসিয়ার  দেখেছিলাম নাকি স্যারদের কাছে খবর চলে যাওয়ায় আর দেখা হয়নি , সেটা মনে নাই। ১৯৮৫ বা ৮৬র কথা।
এতোটুকু মনে আছে , দেবু দা আমার ভিসিয়ার আনার তড়িঘড়ি ভাব দেখে ফেলেছিলেন , পরে বলেছিলেন, বাসায় নাকি নালিশ করবেন।
পুরনো ভাঙ্গাচোড়া বাড়িটি, একই স্কুলের হিন্দু হোস্টেল। একদম প্রথম রুম টা ছিল , বিপদ স্যারের ( বাবু বিপদ ভঞ্জন মিস্ত্রী)  স্যারের কাছে দলে দলে ছাত্ররা প্রাইভেত পড়তে আসতো। আমিও পড়তাম। 
স্যার ক্লাশে  একবার আমার কিছুটা লম্বা চুল কাটার কথা বলে এমোন মুসিবতে পড়েছিলেন, সেই কাহিনী নাই বা বললাম।
তবে, এই যে মুসলিম হোস্টেল, হিন্দু হোস্টেল, এখন মনে হয়, এই বিভেদ টা ছোটোবেলা থেকে না শেখানোই ভাল। ( কোনো সময়েই না) ।
সব ছাত্ররা ভাই বন্ধু র মতে বেড়ে উঠবে।
সামনের বিশাল পুকুর, এটাও আমাদের স্কুলের সম্পত্তি।
  এই পুকুরেও টাউন স্কুলের মাঠে গোছল করে , 
 "ডুবাইছি। "

পুরোনো হোস্টেলগুলো ভেঙ্গে একটা বিশাল আধুনিক বিল্ডিং এ আমাদের স্কুলের ভবিষ্যত প্রজন্ম আবাসিক সুবিধা ভোগ করবে , সেই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
মুসলিম বা হিন্দু হিসাবে ভাগাভাগি করে নয়, একটি বিল্ডিং এই সবাই থাকবে। 
ধর্ম আমাদের আলাদা আলাদা হতেই পারে,  কিন্তু আলাদা আলাদা হোস্টেল এর  দিন পুরনো আমলে ছিল, এখন সেই নিয়ম ভেঙ্গে দিতে হবে।

পিরোজপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় নিয়ে শহরের সবাইকে ভাবতে হবে। এড়িয়ে যাবার উপায় নেই। 


0/Post a Comment/Comments

Previous Post Next Post