Skip to main content

মায়ের কাছে আছে যত ঋণ

লিখেছেন :  আশিক মাহমুদ রিয়াদ


মা-ছোট্ট একটি শব্দ। কিন্তু এই শব্দের পরিধি কিংবা বিস্তৃতি কি বিশাল। সৃষ্টি শুরু থেকে এই শব্দটি শুধু মধুর নয়,ভালোবাসার,আবাগের,ক্ষমতার কিংবা তার চেয়েও বেশি। মায়ের অনুগ্রহ ছাড়া পৃথিবীর কোন প্রানীরই প্রাণ ধারণ করা সম্ভব নয়। তিনি আমাদের মা,আমাদের গর্ভধারিনী। আমাদের জনক,আমাদের জননী। 

'মা' শুধু এই একটি শব্দ পৃথিবীতে কত মধুর। সন্তানের কাছে মা মানে গোটা পৃথিবী। শুধু পৃথিবী বললে ভুল হবে মায়ের কাছে আছে পরকালেরও ঋণ। তাইতো বলে, "মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। ' মা মানে জীবন। 
একজন সন্তানের কাছে মায়ের থেকে মধুর শব্দ আর কি ই বা আছে? একজন নারী যখন জানতে পারেন তার গর্ভে সন্তান এসেছে তখন তিনি পৃথিবীর সব চেয়ে খুশি হন।দশ মাস দশ দিন, শুধু প্রতিক্ষা কবে আসবে সেই শিশু? সেই থেকে শুরু, যত্ন আর ভালোবাসা আর মমতায় টইটম্বুর। পৃথিবীর সব থেকে কষ্ট সন্তান জন্মদানে। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে কত মা তাদের জীবনকে বিসর্জন দিয়েছেন। ফুটফুটে শিশুটি যখন হাসপাতালে প্রথম ক্রদণ সুরে মত্ত, তখন মায়ের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। এ জল আনন্দের, মমতায় মাখা। 
ছোট্ট শিশুটি যখন চোখ পিটপিট করে তাকায় তখন আনন্দে বুক ভরে যায় মায়ের। তার কাছে এই সন্তান যে পৃথিবীর সব থেকে দামী সম্পদ। ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুটি যখন মুখে বুলি আওড়াতে শেখে তখন তার মুখ থেকে পৃথিবীর দামী শব্দ বের হয়,'মা! ' মা আনন্দে কেঁদে ফেলেন। এই সন্তানকে নিয়ে যে তার কত আনন্দ। এই সন্তান যে তার বুকের রত্ন! সব থেকে দামী অলংকার। মাঝরাতে যখন সেই নিষ্পাপ ফুলটি কেঁদে ওঠে, মা বিরক্ত হন না৷ পরম মমতায় জড়িয়ে রাখেন বুকে। ফুলটি মায়ের কোলে গেলেই শান্ত। মায়ের কোল যে এই পৃথিবীর স্বর্গ। এই ইহকালের স্বর্গ,মায়ের পায়ের নিচে পরকালের স্বর্গ। সন্তানটি বড় হতে থাকে, মা এই সন্তানকে নিয়ে কত স্বপ্ন বুঁক বাধেন। ফুলটি আমার মানুষ হবে! ছোট্ট সেই ফুলটি  হাপুর দেয়, হাঁটতে শুরু করে। মা তাকে হাঁটতে শেখায়। ধীরে ধীরে হাঁটা থেকে সে দৌড়াতে শেখে। এক দৌড়ে গিয়ে মা'কে কোলে ওঠে। মায়ের কোল যে পৃথিবীর সব থেকে নিরাপদ স্থান। 

ছোট্ট শিশুটি কথা বলতে শেখে, পাকা পাকা কথা শোনায় মাকে। রাত হলে মা'য়ের কাছে রূপকথার গল্প না শুনে ঘুমায় ই না। মা' যে পৃথিবীর সব থেকে শ্রেষ্ঠ গল্প বলার মানুষ। স্কুলের প্রথম দিন, মা হাত ধরে তার সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যায়! মাকে ছাড়া প্রথম স্কুলের দিন মোটেও ভালো লাগে না৷ মা'ও অপেক্ষায় থাকেন। 

শিশুটির শৈশব কাঁটে মায়ের কড়া শাসনে। আবার রাতে মায়ের কাছে রূপকথার গল্প শুনতে আবদার করে শিশুটি। মা'যে পৃথিবীর সব থেকে কড়া শাসক। 
দিন গড়ায়,কৈশরে মায়ের শাসন আরো বাড়ে,সেই সাথে বাড়ে স্নেহ। মা যে পৃথিবীর সব থেকে ভালো মানুষ। 

দিন গড়ায়,শৈশব থেকে শিশুটি পা রাখে কৈশরে। এ সময় যে পরিবর্তনের। মা বোঝেন। তাই তো ভালো মন্দ খেয়াল রাখেন। কড়া উপদেশ ঝাড়েন, 'এ বয়সটা যে খারাপ! পালের হাওয়ায় গা ভাসিয়ো না। নিজের শরীরকে ঠিক রাখো। ' খেতে বসলে মা বার বার বলেন,'শাক-সবজি খাও!' মায়ের কড়া শাসনে চলতে হয়।এই বয়সে যে আতংক ঘিরে ধরে। হঠাৎ মাও কড়া শাসন করেন। 

 সেই ছোট্ট ফুলটি পাঁ বাড়িয়ে কলেজে ওঠে।হঠাৎ করেই ভয় চলে আসে মায়ের বুকে। সেদিনের সেই ছোট্ট শিশুটি যেন খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেলো। তবুও মা চান,সন্তান আমার মানুষ হোক,থাকুক দুধে ভাতে। 

কলেজে সারা দিন ব্যস্ততা শেষে যখন মাকে ফোন দিতে ভুলে গিয়ে জিভে কামড় দেই। ঠিক তখনই মা আমাদের ফোনদেয়। মা অভিমান করেন না। অভিমান করলেও মায়ের কাছে সেই ছোট্ট শিশুটির মতো হুটিপুটি করে। মা রাগ করোনা,তুমিই যে আমার সব, আমার পৃথিবী আমার বিশ্বভ্রম্মান্ড! 

মায়ের কাছে গোটা জীবনে আমাদের যে ঋণ তা শোধ হবার নয়। 
মা তো মা ই!  
তার থেকে আর কেউ নয় বড় 
এই ধরণীতে।

 মা যে ভালোবাসার,পরম মমতার। 

আজ মে মাসের ১০ তারিখ। বিশ্ব মা দিবস। শুধু এই দিনটি মা দিবস নয়। প্রত্যেকটা দিন ই মা দিবস।প্রতিদিন যে মানুষটি নিজের কথা ভুলে শুধু সন্তানের কথা ভাবেন,তাদের কে জানাই পরম শ্রদ্ধা। আমার কাছে আমার মা সেরা। এই কথাটি একজন সন্তানের কাছে অমুল্য কথন। মা যে সবার সেরা। মা দিবসে পৃথিবীর সব মায়ের ভালো থাকুক আর মায়ের ছোট্ট সন্তানেরা মায়ের আদর মমতায় বেঁচে থাকুক। সৃষ্টিকর্তার কাছে শুধু এই কামনা। প্রতিদিন মা ভালো থাকুক, প্রতিটি ক্ষণ মা ভালো থাকুক। 

Comments

Popular posts from this blog

পিরোজপুর সদরের কিছু উল্লেখযোগ্য মজাদার খাবার ও খাবারের স্থানের নাম

১.আইচ পুরি ভান্ডার এর পুরি।দামুদার ব্রীজের ঠিক এক পাশেই ছোট্ট করে এই পুরির দোকান  । অনেক জায়গায় পুরি খেলেও এটাকে আপনার বেস্ট বলতে হবে কারন ডাল পুরিতে অনেক ডাল এবং আলু পুরিতে অনেক আলু দেয়।  সন্ধ্যার পর ভরপুর গরম গরম পুরি খাওয়ার লাইন‌ লাগে এই দোকানে । প্রতিটা পুরি মাত্র ৫ টাকা। যে পরিমাণ আলু,ডাল ‌ঠুসায় সেই তুলনায় দাম কমই বলা চলে।ট্রাই করতে পারেন কোন এক সন্ধ্যায় । ২.সিও অফিস, ডাচ বাংলা বুথের পাশের চায়ের দোকানের গরুর দুধের চা। ৩.জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটে অবস্থিত ক্যাফে স্ট্রিট ফুড এর মালাই চা।পরিবেশন স্টাইল দারুন।দাম মাত্র ১৫ টাকা। ৪.দুলালের দধি ভান্ডারের রসগোল্লা, রসমালাই, দধি। ৫.ভাই ভাই মিস্টির দোকানের রসগোল্লা,দধি,রসমালাই। ৬.বেকুটিয়া ফেরিঘাটের রাস্তার পাশের ঝাল মুড়ি। ৭.পিরোজপুর পুরান বাসস্ট্যান্ডে খুলনা বাস কাউন্টারের পাশে দোকানের চিতই পিঠা।পিঠার সাথে মরিচ ভর্তা আর সরিষা ভর্তাটা জোশ লাগে। ৮.শেরে বাংলা মার্কেট এর বিপরীতে স্টার হোটেলে হট কফি। ৯.সিও অফিসের ওখানে ক্যাফে আল মদিনার চকলেট হট কফি,চকলেট কোল্ড কফি । দাম ৫০-৬০ টাকার মত লিখেছেন :জি,এম-আদল

পিরোজপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

    লিখেছেন : জি,এম-আদল পিরোজপুর বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা।প্রকৃতি তার নিজ সাজে অপরুপ সৌন্দর্যে পিরোজপুর জেলাকে সাজিয়েছেন। নদীবিধৌত জেলা পিরোজপুরে রয়েছে সেরা কিছু দর্শনীয় স্থান।পিরোজপুর সদর, ইন্দুরকানি, নাজিরপুর, কাউখালী, ভান্ডারিয়া, মঠবাড়ীয়া, নেছারাবাদ এই সাতটি উপজেলা নিয়ে পিরোজপুর জেলা গঠিত। এই উপজেলাগুলোর প্রায় প্রতিটি উপজেলারই রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য, রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান।সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে ভাসমান পেয়ারা হাট, কবি আহসান হাবিব এর পৈত্রিক ভিটা,রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ি,হরিনপালা রিভারভিউ ইকো পার্ক, ভান্ডারিয়া শিশু পার্ক,ভান্ডারিয়া মিয়া বাড়ি মসজিদ,মঠবাড়িয়ার মমিন মসজিদ, পিরোজপুর এর ডিসি পার্ক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।  ভাসমান পেয়ারা হাট : পিরোজপুর জেলার স্বরুপকাঠি উপজেলার আটঘর,কুরিয়ানা নামক জায়গায়  নৌকায় করে এই (Floating Market) ভাসমান পেয়ারা হাট বসে। কবি আহসান হাবিব এর পৈত্রিক ভিটা: কবি আহসান হাবীব একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলা ভাষার অন্যতম একজন খ্যাতনামা কবি।  আহসান হাবীব এর জন্ম ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি,পিরোজপুর সদর উপজেলার শংকরপাশা গ্রামে

পিরোজপুর জেলা নামকরণের ইতিহাস

পৃথিবী সৃষ্টির পিছনে যেমন ইতিহাস রয়েছে ঠিক তেমনি পৃথিবীর প্রতিটি দেশ,বিভাগ,জেলা ও এলাকা সৃষ্টির পিছনে রয়েছে হাজারো গল্প ও ইতিহাস। তেমনি পিরোজপুর জেলা সৃষ্টি ও নামকরণের পিছনেও রয়েছে নানা গল্প ও ইতিহাস। গবেষকদের মতে,আজকের এ পিরোজপুর সুলতানি আমলে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ অঞ্চল পরিচিতি ছিল ফিরোজপুর নামে। মোগল সম্রাট শাহসূজার অকাল প্রয়াত পুত্র ফিরোজশাহের নামে 'ফিরোজপুর' এবং পরে অপভ্রংশ হিসেবে 'পিরোজপুর' নামকরণ হয়েছে। নাজিরপুর উপজেলার শাখারী কাঠির জনৈক হেলালউদ্দীন মোঘল নিজেকে মোঘল বংশের শেষ বংশধর হিসেবে দাবী করেছিলেন। তাঁর মতে বাংলার সুবেদার শাহ্ সুজা আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার নিকট পরাজিত হয়ে বাংলার দক্ষিণ অঞ্চলে এসেছিলেন এবং আত্মগোপনের এক পর্যায় নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীর পারে একটি কেল্লা তৈরি করে কিছুকাল অবস্থান করেন। মীর জুমলার বাহিনী এখানেও হানা দেয় এবং শাহ্ সুজা তার দুই কন্যাসহ আরাকানে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি অপর এক রাজার চক্রান্তে নিহত হন। পালিয়ে যাওয়ার সময় তার স্ত্রী  এক শিশু পুত্রসহ থেকে যায়। পরবর্তীতে তারা অবস্থান পরিবর্তন করে ধীরে