Skip to main content

লকডাউন



লিখেছেন : নাসরিন সিমি

কাজলি ঢাকায় এসেছে কপর্দকশূন্য হাতে দুই সপ্তাহ হলো।
বিয়ের তিন মাসের মাথায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় ওর ভ্যানচালক স্বামী রতন। জেলা শহরের  এক ফার্নিচারের দোকানে চুক্তি অনুযায়ী মালামাল পৌছে দিতো। বিয়ের তিন মাসের মধ্যে রতন মারা যাওয়ার দোষ ট্রাক ড্রাইভারের বদলে গ্রামবাসী আর শ্বশুরবাড়ির লোকজন কাজলি র ভাগ্যকেই দোষারোপ করতে লাগলো।
স্বামীর মৃত্যুর পরে শ্বশুরবাড়িতে ছিলো কিছুদিন কিন্তু পরে এক রাতের ঘটে যাওয়া ঘটনার পর আর থাকা সম্ভব হলোনা।

সেদিন রাতের বেলা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে গেছিলো, পুকুর ঘাটে বদনায় পানি ভরে ফেরার পথে পেছন থেকে চেপে ধরে ওর ছোট চাচা শ্বশুর। জলভর্তি বদনা দিয়ে মুখের উপরে আঘাত করে হাঁপাতে হাঁপাতে ইজ্জত রক্ষা করে ঘরে ফিরে দরজার খিল দেয়। সেই ঘটনার পরপরই কাজলি এসে ওঠে বিধবা মা ও অনাথ দুই ভাইয়ের কাছে।

কাজলির চাচাতো বোন মরিয়ম আসে ঢাকা থেকে সবকিছু শুনে কাজলিকে আশ্বস্ত করে ঢাকা নিয়ে কোন বাসাবাড়িতে ছুটা কাজ পাইয়ে দেয়ার।
ঢাকায় এসে দুই ফ্ল্যাটবাড়ির ছুটা কাজ পেয়ে যায়।
সে বাসায় কাজ করার দুই এক দিন পর দেখে বাড়ির মালকিন ঘর ভর্তি করে চাল,ডাল, তেল,নুন, বিস্কুট,পেঁয়াজ রসুন সহ অনেক অনেক জিনিস সকালে বিকেলে দুই বেলা গাড়ি ভর্তি করে বাজার সদায় এনে মজুদ করে রাখছে। কাজলি র মালকিন অনেক রাগী তাই আর সাহস হলোনা কোন কিছু জিজ্ঞেস করার।

সে ধরেই নিয়েছে সামনে কোন বিয়ে শাদীর অনুষ্ঠান আয়োজন হবে এই বাসায়। এসব দেখে কাজলির মনটা ভালো হয়ে যায়, ভাবে মনে মনে যেদিন অনুষ্ঠান হবে মালকিনকে বলে মরিয়ম বুবুকেও নিয়ে আসবে দুটো ভালো মন্দ খাওয়ার জন্য। এ বাড়ির সবাই বেশ পরিষ্কার কারণ তাঁরা একটু পর পর বোতলে ভরা নীল রঙের পানির মতো একটা জিনিস হাতে মাখে। একদিন শুনছে স্যানিটাইজার না কি যেন তাঁর নাম। এই নীল রঙের পানির বোতল ঘরের মধ্যে খাটের নিচে কয়েকশো বোতল জমা হয়ে ছিলো কাজলি আসার আগে থেকেই।

আজ কাজে আসার সময় গেটের দারোয়ান ঢুকতে দেয়ার আগে ফোন করে ম্যাডাম এর কাছে পারমিশন নিছে।
কাজলি এর মাথামুণ্ডু কিছুই বোঝেনাই।
বাসায় ঢোকার পর মালকিন বলে আজ একটু বেশিই কাজ টাজ গুছিয়ে রেখে দিয়ে যেও। আল্লাহ্ জানে কী আছে কপালে! কথাটা শুনে চমকে উঠে ওর বুক। মালকিনের চোখ এড়িয়ে বুকে থু থু দেয় সে।
কিন্তু হঠাৎ কি এক অজানা কারণে  টেলিভিশনের খবর শুনে বাড়ির মালিক চিন্তিত হয়ে বলে আপাতত তুমি কাল থেকে আর কাজে এসো না। বলে সে ইন্টারকমে বিল্ডিংয়ের বাসিন্দা সবাইকে ফোন দিয়ে একটা কথাই বলে এপার্টমেন্ট লক ডাউন নিয়ে আজ রাতে মিটিং হবে। নয়টায় থাকবেন আপনি।

লক ডাউন কি কাজলি বোঝেনা। রাতে মরিয়ম কে জানাতেই মরিয়ম জিজ্ঞেস করে 'তোরে কী বেতন দিছে ভাঙা মাসের?'
না বইন দেয় নাই
কাইলকা গিয়া বেতন নিয়া আসবি। বাজারে যেই দাম বাড়া বাড়ছে আমার একলার বেতনে কুলাইবেনা।
কাজলি সকালে হেঁটে হেঁটে কামরাঙ্গির চর থেকে ধানমন্ডি যায় বেতনের আশায়
পথে পুলিশের লোক দেখে মনে মনে ভয় পেয়ে যায় আবার ভাবে আমি তো কোন কিছু চুরিটুরি করিনাই। তাইলে সাহেবের বাড়ির সামনের রাস্তায় এতো পুলিশ কেন?

ভাবতে ভাবতে এপার্টমেন্টের গেটে গিয়ে কলিং বেল বাজায়। দারোয়ান এসে বলে এই বিল্ডিং লক ডাউন হইছে। কেউ ভিতরে যাইতে পারবেনা।  কাজলি চোখে অন্ধকার দেখে। আস্তে আস্তে লেকের পাশে দাঁড়ায়। অল্প দূরে  একটা ধুলোবালি গায়ে শিশু নিয়ে ওরই বয়সী একজন ভিক্ষা করছে।
কাজলির কানে ভাসে মরিয়মের কথা
'একজনের বেতনে কুলাইবেনা'। একটা গাড়ি হুশ করে ওর গা ঘেঁষে চলে যায়। রাস্তার পাশে বড় একটা লোকের ছবি ওয়ালা সাইনবোর্ড দেখতে পায়। নিজের অজান্তেই সাইনবোর্ডের সামনে এসেএকটা হাত সামনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে  "কিছু সাহায্য দেন "।

Comments

Popular posts from this blog

পিরোজপুর সদরের কিছু উল্লেখযোগ্য মজাদার খাবার ও খাবারের স্থানের নাম

১.আইচ পুরি ভান্ডার এর পুরি।দামুদার ব্রীজের ঠিক এক পাশেই ছোট্ট করে এই পুরির দোকান  । অনেক জায়গায় পুরি খেলেও এটাকে আপনার বেস্ট বলতে হবে কারন ডাল পুরিতে অনেক ডাল এবং আলু পুরিতে অনেক আলু দেয়।  সন্ধ্যার পর ভরপুর গরম গরম পুরি খাওয়ার লাইন‌ লাগে এই দোকানে । প্রতিটা পুরি মাত্র ৫ টাকা। যে পরিমাণ আলু,ডাল ‌ঠুসায় সেই তুলনায় দাম কমই বলা চলে।ট্রাই করতে পারেন কোন এক সন্ধ্যায় । ২.সিও অফিস, ডাচ বাংলা বুথের পাশের চায়ের দোকানের গরুর দুধের চা। ৩.জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটে অবস্থিত ক্যাফে স্ট্রিট ফুড এর মালাই চা।পরিবেশন স্টাইল দারুন।দাম মাত্র ১৫ টাকা। ৪.দুলালের দধি ভান্ডারের রসগোল্লা, রসমালাই, দধি। ৫.ভাই ভাই মিস্টির দোকানের রসগোল্লা,দধি,রসমালাই। ৬.বেকুটিয়া ফেরিঘাটের রাস্তার পাশের ঝাল মুড়ি। ৭.পিরোজপুর পুরান বাসস্ট্যান্ডে খুলনা বাস কাউন্টারের পাশে দোকানের চিতই পিঠা।পিঠার সাথে মরিচ ভর্তা আর সরিষা ভর্তাটা জোশ লাগে। ৮.শেরে বাংলা মার্কেট এর বিপরীতে স্টার হোটেলে হট কফি। ৯.সিও অফিসের ওখানে ক্যাফে আল মদিনার চকলেট হট কফি,চকলেট কোল্ড কফি । দাম ৫০-৬০ টাকার মত লিখেছেন :জি,এম-আদল

পিরোজপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

    লিখেছেন : জি,এম-আদল পিরোজপুর বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা।প্রকৃতি তার নিজ সাজে অপরুপ সৌন্দর্যে পিরোজপুর জেলাকে সাজিয়েছেন। নদীবিধৌত জেলা পিরোজপুরে রয়েছে সেরা কিছু দর্শনীয় স্থান।পিরোজপুর সদর, ইন্দুরকানি, নাজিরপুর, কাউখালী, ভান্ডারিয়া, মঠবাড়ীয়া, নেছারাবাদ এই সাতটি উপজেলা নিয়ে পিরোজপুর জেলা গঠিত। এই উপজেলাগুলোর প্রায় প্রতিটি উপজেলারই রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য, রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান।সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে ভাসমান পেয়ারা হাট, কবি আহসান হাবিব এর পৈত্রিক ভিটা,রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ি,হরিনপালা রিভারভিউ ইকো পার্ক, ভান্ডারিয়া শিশু পার্ক,ভান্ডারিয়া মিয়া বাড়ি মসজিদ,মঠবাড়িয়ার মমিন মসজিদ, পিরোজপুর এর ডিসি পার্ক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।  ভাসমান পেয়ারা হাট : পিরোজপুর জেলার স্বরুপকাঠি উপজেলার আটঘর,কুরিয়ানা নামক জায়গায়  নৌকায় করে এই (Floating Market) ভাসমান পেয়ারা হাট বসে। কবি আহসান হাবিব এর পৈত্রিক ভিটা: কবি আহসান হাবীব একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলা ভাষার অন্যতম একজন খ্যাতনামা কবি।  আহসান হাবীব এর জন্ম ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি,পিরোজপুর সদর উপজেলার শংকরপাশা গ্রামে

পিরোজপুর জেলা নামকরণের ইতিহাস

পৃথিবী সৃষ্টির পিছনে যেমন ইতিহাস রয়েছে ঠিক তেমনি পৃথিবীর প্রতিটি দেশ,বিভাগ,জেলা ও এলাকা সৃষ্টির পিছনে রয়েছে হাজারো গল্প ও ইতিহাস। তেমনি পিরোজপুর জেলা সৃষ্টি ও নামকরণের পিছনেও রয়েছে নানা গল্প ও ইতিহাস। গবেষকদের মতে,আজকের এ পিরোজপুর সুলতানি আমলে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ অঞ্চল পরিচিতি ছিল ফিরোজপুর নামে। মোগল সম্রাট শাহসূজার অকাল প্রয়াত পুত্র ফিরোজশাহের নামে 'ফিরোজপুর' এবং পরে অপভ্রংশ হিসেবে 'পিরোজপুর' নামকরণ হয়েছে। নাজিরপুর উপজেলার শাখারী কাঠির জনৈক হেলালউদ্দীন মোঘল নিজেকে মোঘল বংশের শেষ বংশধর হিসেবে দাবী করেছিলেন। তাঁর মতে বাংলার সুবেদার শাহ্ সুজা আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার নিকট পরাজিত হয়ে বাংলার দক্ষিণ অঞ্চলে এসেছিলেন এবং আত্মগোপনের এক পর্যায় নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীর পারে একটি কেল্লা তৈরি করে কিছুকাল অবস্থান করেন। মীর জুমলার বাহিনী এখানেও হানা দেয় এবং শাহ্ সুজা তার দুই কন্যাসহ আরাকানে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি অপর এক রাজার চক্রান্তে নিহত হন। পালিয়ে যাওয়ার সময় তার স্ত্রী  এক শিশু পুত্রসহ থেকে যায়। পরবর্তীতে তারা অবস্থান পরিবর্তন করে ধীরে