Skip to main content

প্রথম আলোতে পিরোজপুরের সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ নিয়ে ফিচার



লিখেছেন : ডাঃ‌সিদ্ধার্থ দেব মজুমদার
সরকারি সোহওয়ার্দী কলেজ পিরোজপুর দক্ষিণের এক বাতিঘর।


এই ক্যাম্পাস সত্যিকার অর্থেই শিক্ষার্থীদের প্রাণ।
মেহগনি আর শিরীষগাছের সারি যে রাস্তাটায়, সেখান থেকে উত্তরের ভবনগুলোর দিকে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছেন সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের কয়েকজন ছাত্র। তাঁদের হাতে সময় খুব কম। দুই ক্লাসের মাঝের বিরতিতে তাঁরা টেবিল টেনিস খেলবেন। তাঁদের মধ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এস এম বায়জিদ আর হিসাববিজ্ঞানের সালমান খান—দুজনই দুর্দান্ত টেবিল টেনিস খেলেন। কে বেশি ভালো খেলেন, তার একটা হেস্তনেস্ত হবে আজ!

ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ ভবনে খেলা জমে উঠল। প্রথম রাউন্ডে জিতে গেলেন সালমান, দ্বিতীয় রাউন্ডে জয় বায়জিদের। তৃতীয় রাউন্ডে খেলাটা আর দুজনের মধ্যে থাকল না, হয়ে গেল রাষ্ট্রবিজ্ঞান বনাম হিসাববিজ্ঞানের টক্কর। তুমুল উত্তেজনায় খেলা চলল।

কলেজের মূল ভবনের সামনে বড় এক দিঘি। দিঘির পাড় ঘেঁষা গাছগুলো বড় মায়ায় ছায়া দিয়ে রেখেছে। হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সুপান্থ হালদার এখানে দাঁড়িয়ে দিঘিতে ঢিল ছুড়ছিলেন, তিনি বললেন, ‘আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসটা এই জলের মতোই শান্ত। সবাই এখানে মিলেমিশে থাকে। কলেজে মসজিদ যেমন আছে, মন্দিরও আছে। এখানে আমরা শুধু পড়াশোনা করি না, একে অন্যের উৎসবে, একে অন্যের প্রয়োজনে পাশে গিয়ে দাঁড়াই।’


কলেজের দক্ষিণ দিকের মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। দখিনা বাতাসের জোর যে বাড়ছে, এখানে এলে খুব বোঝা যায়। তাঁদের আড্ডাও চলছে বাতাসের বেগে। কয়েক দিন আগে শেষ হওয়া কলেজের ফুটবল টুর্নামেন্ট যে এখনো শেষ হয়নি, আড্ডায় কান পেতে বোঝা গেল। এই টুর্নামেন্ট নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ফুটবল দলের সহ-অধিনায়ক মো. রাব্বি ইসলামের আফসোস কিছুতেই যাচ্ছে না। সামান্য কিছু ভুলের জন্য সেমিফাইনাল থেকে তাঁদের এবার বাদ পড়তে হয়েছে। রাব্বি জানালেন, ‘আমাদের কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি সব ধরনের খেলাধুলা হয় নিয়মিত।’ আগামীবার চ্যাম্পিয়নের ট্রফিটা যে হাতছাড়া করতে রাজি নন, কথার শেষে সেই প্রত্যয়ও জুড়ে দিলেন।

১৯৫৭ সালে পিরোজপুর সদরে স্থাপিত এই কলেজটি সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়েছে। শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট যেমন দিনে দিনে ভালো হয়েছে, তেমনি সমৃদ্ধ হয়েছে পাঠাগার ও গবেষণাগার। প্রায় ১১ একর আয়তন নিয়ে গড়ে ওঠা বিশাল এই ক্যাম্পাসে উচ্চমাধ্যমিক ছাড়াও ১৪টি বিষয়ে স্নাতক পড়ার সুযোগ আছে। স্নাতকোত্তর আছে ৮টি বিষয়ে। এখানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্নাতকোত্তরের ছাত্র রক্তিম ঢালী। তাঁকে পাওয়া গেল শহীদ মিনার চত্বরে। খুব মনোযোগ দিয়ে তিনি মুঠোফোনে কী যেন দেখছেন। জানালেন, ক্যাম্পাসের এই অংশ ওয়াই-ফাই জোনের আওতায়। তাই ক্লাস বাদে অন্য সময়টুকু এখানেই বসা হয়। দেখা গেল অনেক শিক্ষার্থী বাড়ি ফেরার আগে এখানে বসে ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয় কাজটুকু সেরে নিচ্ছেন।

গণিত বিভাগের সামনে পাওয়া গেল মো. শওকত ওসমানকে। এ কলেজ থেকে তিনি গণিতে স্নাতক করেছেন। এখন আছেন স্নাতকোত্তরের অপেক্ষায়। সাহিত্যে না পড়লেও বাঙালির উৎসব নিয়ে তাঁর উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। কলেজে কী কী উত্সব হয় জানতে চাইলে একটানা বললেন, রবীন্দ্রজয়ন্তী, নজরুলজয়ন্তী, বর্ষবরণ, পিঠা উৎসব, বসন্ত উৎসব—সব মিলিয়ে সারা বছর কোনো না কোনো অনুষ্ঠান চলছেই। বাংলা বিভাগের সামনে দেখা এইচ এম নাঈমের সঙ্গে। তিনি বাংলা সাহিত্যে স্নাতক করছেন। বললেন, ‘আমাদের এখানে সংস্কৃতিচর্চাটা নিয়মিতই হয়। কলেজ থেকে ম্যাগাজিন বের হয়। ছাত্ররা সেখানে খুব আগ্রহ নিয়ে লেখে। সত্যিকার অর্থেই কলেজটা আমাদের প্রাণের কলেজ।’

ছাত্র সংসদ ভবনটি কলেজ ক্যাম্পাসের ঠিক মাঝখানে। সেখানে দেখা হলো বর্তমান ভিপি এস এম বায়জিদের সঙ্গে। তাঁর বক্তব্য, ‘কলেজে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক খুব ভালো। যেকোনো প্রয়োজনে আমরা শিক্ষকদের কাছে পাই। তবে আমাদের একটা সমস্যা হলো, কলেজে কোনো ক্যানটিন নেই। অনেক দূর থেকে ছাত্ররা এখানে পড়তে আসে। সামান্য কিছু খেতে হলেও তাদের আবার শহরেই ছুটতে হয়।’

সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজে আছে দক্ষ একটি স্কাউট দল। আছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) এবং রেড ক্রিসেন্টের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসের মতো রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে তাঁরা জেলা প্রশাসনকে সাহায্য করেন। রেড ক্রিসেন্টের সঙ্গে যুক্ত এইচ এম শিবলী রহমান বলেন, ‘দেশের দক্ষিণ অংশ যখন সিডরের আঘাতে প্রায় ভেঙে পড়েছিল, আমাদের কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের সাহায্যের জন্য সবটুকু নিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা মানুষের পাশে থাকি।’ এই কলেজের শিক্ষার্থীরা মানুষের পাশে থাকবেন না-ই বা কেন, কলেজের প্রধান ভবনেই তো বিরাট হরফে লেখা ‘জ্ঞানের সন্ধানে এসো, জ্ঞান অর্জন করো, দেশের সেবা করো’।

সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. দেলোয়ার হোসেন কলেজ নিয়ে তাঁর সন্তুষ্টির কথাই জানালেন। বললেন, ‘কলেজটিতে ১০ হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী পড়ছে। ছাত্র এবং অভিভাবকদের আস্থার কারণে দেশের দক্ষিণ অংশের অন্যান্য জেলা থেকেও ছাত্ররা এখানে পড়তে আসে।’ সন্তুষ্টির সঙ্গে খানিকটা আফসোসের কথাও তিনি জানালেন। এখানে ৬৩টি শিক্ষকের পদে কর্মরত আছেন মাত্র ৪১ জন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৪৩টি পদ আছে, অথচ কাজ করছেন মাত্র ৮ জন।

Comments

Popular posts from this blog

দোকান,ব্যাংক-বীমা,অফিস স্পেস ভাড়া বিজ্ঞপ্তি: ফেব্রুয়ারি ২০২৪🏡

  পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন জায়গায় এই দোকান,ব্যাংক-বীমা,অফিস স্পেসগুলো ভা ড়া হবে। নিচের তালিকা থেকে খুঁজে নিন আপনার প্রয়োজনীয় স্পেস টি: ১)বিবরণ :  ভাড়া হবে ব্যাংক/ বিমা/ অফিস    ৪ তলায় ছাদ দেয়া আছে ইচ্ছে মতো করে দেয়া যাবে।  লোকেশন: পারেরহাট রোড, ম্যালেরিয়া পুল, ওয়ালটন সার্ভিস সেন্টার বিল্ডিং।  যোগাযোগ : 01611200299         : 01711570893 ২) বিবরণ:  পৌরসভার স্টল এর একটি দোকান ভাড়া দেওয়া হইবে। লোকেশন: পিরোজপুর শহরের রাজারহাট বাটা শোরুমের বিপরীত পাশে।  যোগাযোগ : 01718050094 ৩) বিবরণ : বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় তলা ভাড়া দেয়া হবে  ব্যাংক অথবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এর জন্য।  বর্তমানে বিল্ডিংয়ের প্রথম তলায় আছে,   বাংলাদেশের সনামধন্য গার্মেন্টস পন্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান "ADLIB". দ্বিতীয় তলা = অগ্রিম ৬ লক্ষ টাকা এবং মাসিক ভাড়া ২১০০০ টাকা। তৃতীয় তলা = অগ্রিম ৫ লক্ষ টাকা এবং মাসিক ভাড়া ১৫০০০ টাকা। লোকেশন: পিরোজপুর সদর রোড, সাধনা ব্রিজ সংলগ্ন, যোগাযোগ : ০১৭১২৭৪৪৫৩৬ বি.দ্র: দ্রুত সময়ের মধ্যে আপনার ...

দোকান,ব্যাংক-বীমা,অফিস স্পেস ভাড়া বিজ্ঞপ্তি: মার্চ ২০২৪🏡

  পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন জায়গায় এই দোকান,ব্যাংক-বীমা,অফিস স্পেসগুলো ভাড়া হবে। নিচের তালিকা থেকে খুঁজে নিন আপনার প্রয়োজনীয় স্পেস টি: ১) শোরুম/ ব্যাংক/কোচিং সেন্টার/ ক্লিনিক/ ডায়াগনস্টিক সেন্টার/চাইনিজ রেস্টুরেন্ট এর জন্য ভাড়া দেওয়া হবে।  বিবরন: ফ্লোর সাইজ ১ম তলা  ৩০০০ এবং ২য় তলা ৩৫০০ স্কয়ার ফিট।১ম ও ২য় তলা কমার্শিয়াল স্পেস (শোরুম/ ব্যাংক/কোচিং সেন্টার/ ক্লিনিক/ ডায়াগনস্টিক সেন্টার/চাইনিজ রেস্টুরেন্ট এর জন্য) ভাড়া দেওয়া হবে।  লোকেশন: পিরোজপুর জেলা শহরের প্রানকেন্দ্রে সালাম প্লাজা।  যোগাযোগ:  01711902109 ২) অফিস/শো-রুম/ডিপো এর জন্য ভাড়া হবে🏠 বিবরন:২৩০০ SFT নীচতলা ও ২য় তলা সহ একত্রে অথবা আলাদা ভাবে ভাড়া হবে। লোকেশন: সোহরাওয়ার্দী কলেজ রোড, মেইন রোডের সাথে। গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা আছে। যোগাযোগ: ০১৭১১৭৮৪২৩০ বি.দ্র: দ্রুত সময়ের মধ্যে আপনার মনের মতো বাসা খুঁজে পেতে আমার পিরোজপুর.কম থেকে নিতে পারেন Search Home সার্ভিস। মনে রাখবেন, যারা বাসা ভাড়া দিতে চান তাদের জন্য আমার পিরোজপুর.কম এর পক্ষ থেকে রয়েছে Smart To-Let সার্ভিস। আর যারা বাসা ভাড়া নিতে চান তাদের জ...

জানুয়ারি ২০২৪ এর জমি বিক্রির কিছু বিজ্ঞপ্তি 🪧

পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় জমিগুলো বিক্রি হবে। ১.পিরোজপুর পৌরসভার মধ্যে জেলা স্টেডিয়ামের দক্ষিণ পাশে আহসান হাবীব রোডে একসাথে, একদাগে ৮ শতাংশ করে ২টি প্লট, মোট ১৬ শতাংশ বাড়ি করার উপযোগি উচু জায়গা বিক্রয় করা হইছে। যোগাযোগ :(নামাজের সময় ব্যতীত) 01718050094 01734034194ll. ২.পিরোজপুর সোহরাওয়ার্দী কলেজের রোড থেকে একটু সামনে ওয়াটার অব্দা রোড়ে জমি বিক্রয় হবে। বিবরণ: প্রয়োজন মত নিতে পারবেন 4/5/6 শতক। যোগাযোগ: 01752900135 ৩.পিরোজপুর  বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েত আফিসের পাশে টিনের ঘর সহ জায়গা বিক্রি করা হবে। যোগাযোগ: ০১৯১৮-২৯২৭০৪ ৪. জমি : শতাংশ ৫০ মালিক: মো: মজিবর আকন ভরাটকৃত জমি বাড়ি করার জন্য উপযুক্ত জমি কোন ধরনের মাটি দিতে হবে না,  জমিতে সুপা‌রি বাগান ও নাল জ‌মি।  সমস্ত ডকুমেন্ট খাজনা খারিজ আপটুডেট। বিস্তারিত জানতে নিম্ন ফোন নম্ব‌রে যোগাযোগ করুন: ঠিকানা :মঠবা‌ড়িয়া আলিম সি‌নেমা হ‌লের পার্শ্ববর্তী রাস্তা, আলহাজ্ব আজিজ খলিফার মাদ্রাসার পশ্চিম পাশে,মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর যোগাযোগ : 01717422282 ৫. জমি দাতা: মারুফুল আলম জমির ঠিকানা: উত্তর মিঠাখালী সরকারি পোস্ট অফিস সং...