Skip to main content

প্রিয় হাই স্যার ও ঝাল চকলেট

লিখেছেন : মোঃ সোহেল রানা রাসেল


 প্রাইমারী পার করে হাইস্কুলে উঠেছি। প্রাইমারীর গন্ধ ক্লাস এইট পর্যন্ত থাকে। আমরা সবেমাত্র ক্লাস সিক্সের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা শেষ করলাম। "আমি এখন ক্লাস সিক্সে, রুখবে আমায় কে" সরকারের মেয়েদের স্কুলগামী করতে প্রণোদনার স্লোগানটির মতো আমাদের দূরন্ত অবস্থা। 

টিফিন শেষ, ঘন্টা পরে গেছে। টিফিনের পরে আমাদের প্রথম পিরিয়ড শুরু হয় আর্মি ব্যারাকে থাকা সৈন্যদের মতো। কারণ, নিয়ম-নীতি আর শৃঙ্খলা পালনে আঃ হাই স্যার জাঁদরেল আর্মি অফিসারদের মতোই। শুধু তার উচ্চতার কারণে তাকে আর্মি অফিসার মনে হয় না। স্যারের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা টিফিন শেষ হওয়ায় পাঁচ মিনিট আগেই ক্লাসে উপস্থিত হয়েছি। কিন্তু পুরো ক্লাস জুড়ে হৈ হুল্লোড়। টিফিন টাইমের একটু পরেই মুষল ধারে বৃষ্টি হয়ে গেছে। এখনো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে তার রেশ রয়ে গেছে। আমরা অনেকেই ছাতা না থাকায় টিফিন খেতে বাহিরে যাইনি। কেউ কেউ ছাতা আনার পরেও বৃষ্টিতে ভিজে টিফিন খেয়ে এসেছে। বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর ঠান্ডা লাগার ভয় থাকে। তার পরে ভিজে অবস্থায় ক্লাস করাও অসম্ভব। হেডস্যার পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগে দুই তিন দিন ক্লাস ছুটি করে দিয়েছিলেন। টিফিনের পরে ক্লাস করা সবথেকে বিরক্তিকর একটা কাজ। সবাই কেমন ঝিমিয়ে পড়ে। আজকে ক্লাস ছুটি নেওয়ার এমন সুযোগ মিস করা যায় না। আমরা কয়েকজন মিলে দরখাস্ত লিখছি।

ঢিলেঢালা পায়জামার সাথে পাঞ্জাবি। হাতে নাদুস-নুদুস একখানা বেত নিয়ে স্যার ক্লাসে ঢুকলেন। তাঁর ঢিলেঢালা পায়জামাকে আমরা মহিলাদের পেটিকোটের সাথে তুলনা করতাম। এটাই তাঁর ফ্যাশন। কিন্তু রেগুলার বেত নিয়ে ক্লাসে আসা তাঁর ফ্যাশন না। তিনি কথার মাধ্যমে যা শাস্তি দিতেন তা আমাদের জন্য যথেষ্ট ছিল। একবার তার হাস্যরসাত্মক অপমানে বাবুর নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল। ও ইউনিফর্ম না পরে নানান রঙের বড় বড় চেকের একটা শার্ট পরে ক্লাসে এসেছিল। ব্যাস আর যায় কোথায়! কি স্কুলে চানাচুর বেঁচতে আইছো? লাভের টাকায় কাল ইউনিফর্ম পরে আসতে পারবি তো? সবার খুব হাসি পেলেও তার হাসি হাসি মুখের রহস্যে আমরা নিশ্চুপ থাকাই নিরাপদ মনে করতাম সবসময়। ভয় দেখিয়ে জয় করতে পারলে অস্ত্রের কি প্রয়োজন? এটাই তাঁর মহাবিদ্যা ছিল। দৃষ্টির সীমানায় তাঁকে দেখলেই দুনিয়ায় খারাপ ছাত্রটি ভালো সেজে উঠতো। আজ বেত নিয়ে ক্লাসে ঢুকার বিশেষ কারণ আছে। মুহূর্তেই ক্লাসে পিনপতন নীরবতা।

 স্যার  আজ সোজা গিয়ে চেয়ারে বসলেন না। দরখাস্ত লেখা খাতা নিয়ে দরজার কাছের ফার্স্ট বেঞ্চের কোনায় গিয়ে দাঁড়ালেন। আমরা মনে মনে দুরুদ পাঠ করছি। কার কপাল আজ খারাপ আছে শুধু আল্লাহ ও স্যার জানেন। কিন্তু যা ঘটতে চলেছে তার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। স্যার মুখে চওড়া হাসি এনে সবার উদ্দেশ্যে বললেন তোরা ঝাল চকলেট খেতে চাও কে কে? আজ তোদের সবাইকে ঝাল চকলেট খাওয়াবো। সবাই বাম হাত পাতবি। স্যার সবাইকে পঞ্চাশ পয়সার ঝাল চকলেট দিবেন শুনে মনে স্বস্তি অস্বস্তি দুটোই কাজ করছে। স্যারের বাম হাত পকেটে আর ডান হাতে বেত।

 নির্দেশ মতো সবাই বাম হাতে চকলেট নিয়ে চুষে চুষে খাচ্ছি। ঝালটা শুধু জিবে অনুভব করছি না। যখন চকলেট হাতে নিয়েছিলাম তখন গরম কয়লা হাতে নেওয়ার মতো ঝলসে উঠে ছিল। এখন জিবের রসে সেটা ফ্রিজ থেকে বেড় করা শক্ত মাছের মতো হয়ে আছে। দুটো করে চকলেট ক্লাসের সবাইকে দেওয়া হলো। এখন আমাদের চোখে ঝাল চকলেটের ঝাঁঝ। পিনপতন নিরবতা আগেই ছিল। মাঝখানে কয়েক মিনিট কতগুলো সপাং সপাং শব্দে পরিবেশটাকে ঘুমোট করে দিয়েছে।

 স্যারের প্রশ্নে ক্লাসে নীরবতা ভাঙ্গলো, ইচ্ছে করে বৃষ্টিতে ভিজলি কেন? আমাদের ফাঁকি দেওয়া শিখে গেছো মনে করো? ছোট্ট ছোট্ট ডাউকের(ডাহুক) বাচ্চারা আবার মিথ্যে দরখাস্ত লিখে! ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ভবিষ্যতকে যতটা ফাঁকি দিবি, তার থেকে বেশি ফাঁকি তোদের মধ্যে বাস করছে। মিথ্যে বলা, প্রতারণা করা নিকৃষ্ট পথ। বই পড়ে আলোকিত হওয়া তোদের কাজ। যার আলোয় সবার অন্ধকার দূর হবে। এই শিক্ষাটা আজীবন যেন মনে থাকে।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করার যাত্রায় অনেক স্যারদের শাসনের সাথে ভালোবাসা পেয়েছি। সবার একটাই প্রত্যাশা ছিল- মানুষের চেহারায় জন্ম নেয়া মানুষকে সত্যিকার মানুষ গড়া। তাদের নিরন্তর নিরলস প্রচেষ্টার অম্ল মধুর স্মৃতিগুলো সবসময় আমাদের তাড়িত করে। আজ বয়সে অনেক বড় হয়েছি, মানুষ হতে পেরেছি কিনা জানিনা। কিন্তু শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের শাসনের ঝাঁঝ মানুষ হওয়ার চেষ্টায় সাথে নিয়ে চলছি। সবাইকে আলোকিত করার প্রচেষ্টায় রত সকল শিক্ষকের প্রতি রইল শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।

Comments

Popular posts from this blog

পিরোজপুর সদরের কিছু উল্লেখযোগ্য মজাদার খাবার ও খাবারের স্থানের নাম

১.আইচ পুরি ভান্ডার এর পুরি।দামুদার ব্রীজের ঠিক এক পাশেই ছোট্ট করে এই পুরির দোকান  । অনেক জায়গায় পুরি খেলেও এটাকে আপনার বেস্ট বলতে হবে কারন ডাল পুরিতে অনেক ডাল এবং আলু পুরিতে অনেক আলু দেয়।  সন্ধ্যার পর ভরপুর গরম গরম পুরি খাওয়ার লাইন‌ লাগে এই দোকানে । প্রতিটা পুরি মাত্র ৫ টাকা। যে পরিমাণ আলু,ডাল ‌ঠুসায় সেই তুলনায় দাম কমই বলা চলে।ট্রাই করতে পারেন কোন এক সন্ধ্যায় । ২.সিও অফিস, ডাচ বাংলা বুথের পাশের চায়ের দোকানের গরুর দুধের চা। ৩.জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটে অবস্থিত ক্যাফে স্ট্রিট ফুড এর মালাই চা।পরিবেশন স্টাইল দারুন।দাম মাত্র ১৫ টাকা। ৪.দুলালের দধি ভান্ডারের রসগোল্লা, রসমালাই, দধি। ৫.ভাই ভাই মিস্টির দোকানের রসগোল্লা,দধি,রসমালাই। ৬.বেকুটিয়া ফেরিঘাটের রাস্তার পাশের ঝাল মুড়ি। ৭.পিরোজপুর পুরান বাসস্ট্যান্ডে খুলনা বাস কাউন্টারের পাশে দোকানের চিতই পিঠা।পিঠার সাথে মরিচ ভর্তা আর সরিষা ভর্তাটা জোশ লাগে। ৮.শেরে বাংলা মার্কেট এর বিপরীতে স্টার হোটেলে হট কফি। ৯.সিও অফিসের ওখানে ক্যাফে আল মদিনার চকলেট হট কফি,চকলেট কোল্ড কফি । দাম ৫০-৬০ টাকার মত লিখেছেন :জি,এম-আদল

পিরোজপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

    লিখেছেন : জি,এম-আদল পিরোজপুর বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা।প্রকৃতি তার নিজ সাজে অপরুপ সৌন্দর্যে পিরোজপুর জেলাকে সাজিয়েছেন। নদীবিধৌত জেলা পিরোজপুরে রয়েছে সেরা কিছু দর্শনীয় স্থান।পিরোজপুর সদর, ইন্দুরকানি, নাজিরপুর, কাউখালী, ভান্ডারিয়া, মঠবাড়ীয়া, নেছারাবাদ এই সাতটি উপজেলা নিয়ে পিরোজপুর জেলা গঠিত। এই উপজেলাগুলোর প্রায় প্রতিটি উপজেলারই রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য, রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান।সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে ভাসমান পেয়ারা হাট, কবি আহসান হাবিব এর পৈত্রিক ভিটা,রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ি,হরিনপালা রিভারভিউ ইকো পার্ক, ভান্ডারিয়া শিশু পার্ক,ভান্ডারিয়া মিয়া বাড়ি মসজিদ,মঠবাড়িয়ার মমিন মসজিদ, পিরোজপুর এর ডিসি পার্ক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।  ভাসমান পেয়ারা হাট : পিরোজপুর জেলার স্বরুপকাঠি উপজেলার আটঘর,কুরিয়ানা নামক জায়গায়  নৌকায় করে এই (Floating Market) ভাসমান পেয়ারা হাট বসে। কবি আহসান হাবিব এর পৈত্রিক ভিটা: কবি আহসান হাবীব একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলা ভাষার অন্যতম একজন খ্যাতনামা কবি।  আহসান হাবীব এর জন্ম ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি,পিরোজপুর সদর উপজেলার শংকরপাশা গ্রামে

পিরোজপুর জেলা নামকরণের ইতিহাস

পৃথিবী সৃষ্টির পিছনে যেমন ইতিহাস রয়েছে ঠিক তেমনি পৃথিবীর প্রতিটি দেশ,বিভাগ,জেলা ও এলাকা সৃষ্টির পিছনে রয়েছে হাজারো গল্প ও ইতিহাস। তেমনি পিরোজপুর জেলা সৃষ্টি ও নামকরণের পিছনেও রয়েছে নানা গল্প ও ইতিহাস। গবেষকদের মতে,আজকের এ পিরোজপুর সুলতানি আমলে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ অঞ্চল পরিচিতি ছিল ফিরোজপুর নামে। মোগল সম্রাট শাহসূজার অকাল প্রয়াত পুত্র ফিরোজশাহের নামে 'ফিরোজপুর' এবং পরে অপভ্রংশ হিসেবে 'পিরোজপুর' নামকরণ হয়েছে। নাজিরপুর উপজেলার শাখারী কাঠির জনৈক হেলালউদ্দীন মোঘল নিজেকে মোঘল বংশের শেষ বংশধর হিসেবে দাবী করেছিলেন। তাঁর মতে বাংলার সুবেদার শাহ্ সুজা আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার নিকট পরাজিত হয়ে বাংলার দক্ষিণ অঞ্চলে এসেছিলেন এবং আত্মগোপনের এক পর্যায় নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীর পারে একটি কেল্লা তৈরি করে কিছুকাল অবস্থান করেন। মীর জুমলার বাহিনী এখানেও হানা দেয় এবং শাহ্ সুজা তার দুই কন্যাসহ আরাকানে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি অপর এক রাজার চক্রান্তে নিহত হন। পালিয়ে যাওয়ার সময় তার স্ত্রী  এক শিশু পুত্রসহ থেকে যায়। পরবর্তীতে তারা অবস্থান পরিবর্তন করে ধীরে