Skip to main content

শেষ মানবী : সায়েন্স ফিকশন


লিখেছেন : এম.হাসান


১.মায়া ওয়েটিং রুমে বসে আছে ।তার সামনে একটি DXii মডেলের  রোবট এসে দাঁড়ায় ।রোবটটি অবিরাম বলতে লাগলো "মায়া, তোমায় স্বাগতম । তুমি মহামান্য আ্যলেক্স এর সাথে দেখা করার অনুমতি পেয়েছো ।তিনি তোমার জন্য অপেক্ষা করছে ।তুমি আমায় অনুসরন করো ,আমি তোমাকে তার কাছে নিয়ে যাব ।"কথাগুলো বিশ্বাস হচ্ছে না তার ।সাধারন মানুষের পক্ষে আ্যলেক্স এর মহান বিজ্ঞানীর সাথে দেখা করা প্রায় অসম্ভব ।
মায়াকে তার বাবা ছোট বেলায় এক ধরনের পুতুল কিনে দিয়েছিলো ,যেটা ব্যাটারির সাহায্যে চলোতো এবং কথাও বলতো ।এই রোবটটার কথা বলার ধরন অনেকটা সেই পুতুলটার মত ।"মায়া, তোমায় স্বাগতম । তুমি মহামান্য আ্যলেক্স এর সাথে ............"
রোবটটি যেনো থামার নামই নিচ্ছে না ।
অবশেষে মায়া উঠে দাঁড়ায় ।রোবোটটা হাটা শুরু করে ।মায়া তাকে অনুসরন করতে থাকে । এই DXii মডেলের  রোবটগুলোর মুখশ্রী খুবই বাজে ।কিছুটা দৈত্য দৈত্য ভাব ।তাছাড়া এই রোবটদের তৈরী করা হয়েছে শুধু নির্দেশ পালন করার জন্য ।কোনো ধরনের প্রটোকল ভাঙার ক্ষমতা এদের নেই । শুধুমাত্র AT96 মডেলের রোবটদের এই ক্ষমতা আছে ।AT96 মডেলের রোবটগুলো মানুষের অনুরুপ ।এদের শুধু প্রজনন ক্ষমতাটাই নেই ।তবে খুব তারাতারি সেটাও আবিস্কার করা হবে । AT96 এর  প্রজনন ক্ষমতা আবিস্কার করতে চলেছে বিজ্ঞানী ডঃ ফারহান ।তিনিও আ্যলেক্স এর সাথে কাজ করে ।এই রোবট সংস্থাটি পুরো পৃথিবীর সব মডেলের রোবটের আবিস্কারক ও নিয়ন্ত্রক  ।বর্তমানে  সারা বিশ্বে নানা মডেলের রোবট রয়েছে ।যার ভিতরে AT96 মডেলের রোবটগুলো সব থেকে উন্নত ।এদের দেখতেও অবিকল মানুষের মত ,এদের নিজস্ব চিন্তা-চেতনা আছে । বেশ কিছু বিষয়ে এরা নিজেরাই সিদ্বান্ত নিতে পারে এবং সে কোনো বিষয়ে প্রটোকল ভাঙার ক্ষমতা এদের আছে ।ভবিষ্যতে সারা বিশ্বই হবে AT96 এর বাসস্থান । মানুষ এখন  আ্যলেক্স এর  হাতের পুতুল । কারন আ্যলেক্স  সমস্ত মানব জাতিকে নিয়ন্ত্রন করছে MCC (Mind Control Chip )  দিয়ে ।৫ বছর আগে মায়ার বাবা ডঃ নওরোজ এটি আবিস্কার করেছিলেন মানব জাতির কল্যাণের জন্য ।কিন্তু আ্যলেক্স তাকে হত্যা করে সেই চিপ হাতিয়ে নেয় এবং তা স্থাপন করে সকল মানব জাতির ভেতরে । এই চিপের মাধ্যমেই সে মানব জাতিকে ধংসের মুখে ফেলেছে তাদের আত্বহত্যা করতে প্ররচোনা দিয়ে ।এই চিপ মানব জাতির শরীরে স্থাপন করতে আ্যলেক্স,ডঃ ফারহানকে ব্যাবহার করেছে ।মায়া এসব ব্যাপারে জানতে পারে ডঃ ফারহানের কাছ থেকে ।ফারহান মায়ার শরীরে সেই মরনঘাতী চিপটি লাগায় নি । যার ফলে মায়া আ্যলেক্সএর নিয়ন্ত্রনের বাইরে ।
এসব কথা ভাবতে ভাবতে সে আ্যলেক্সএর রুমের সামনে এসে দাঁড়ায় ।তাকে রুমের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে রোবটটি চলে যায় । তার কাজ হয়তো এখানেই সমাপ্ত ।

-হ্যালো মায়া,তোমাকে দেখে ভালো লাগলো ! কেমন আছো ?
-যেমনটি আপনি রেখেছেন !আ্যলেক্সএর সামনে দাঁড়িয়ে মায়া উত্তর দেয় ।
-বসো ।
-প্রয়োজন বোধ করি না ।
-আমার সাথে দেখা করতে চাওয়ার কারনটা জানতে পারি ?
-নিজের বাবার খুনিকে দেখতে এলাম ।
-আর কিছু ?নিচু স্বরে জিগ্যাস করে আ্যলেক্স ।
-কিছু প্রশ্নের উত্তর জানার ছিলো ।
-কি প্রশ্ন তোমার ?
-আপনার উদ্দেশ্য কি ? কেনই বা করছেন এসব ?
-আমি চাই এই পৃথিবীতে শুধুমাত্র রোবটের বসবাস হোক ।
-তাই বলে আপনি নিরীহ মানুষগুলোর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন ?
-হ্যা ,খেলবো ।
-কিন্তু কেনো ?
-তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই আমি ।
-আমি যাই ।মায়া হাটা শুরু করে ।
-মায়া, দাঁড়াও ।
মায়া দাঁড়ায় ।
-কোথায় যাচ্ছো ? তোমার বাবাকে নিয়ে যাবে না ?
-আমার বাবা ! মায়ার চোখদুটো পানিতে ছলছল করতে থাকে ।
-হ্যাঁ ,তোমার বাবা ।
-কোথায় উনি ?
-পাশের রুমে ,তুমি তাকে নিয়ে যেতে পারো ।
এবারে মায়ার মাথায় খুন চেপে যায় ।
-আমার বাবাকে গত ৫টি বছর আটকে রেখেছেন !আপনি জানেন এই ৫ টি বছর বাবাকে কত জায়গায় খুজেছি ?শেষে তো ভেবেছিলাম বাবাকে আর কোনো দিন খুজে পাবো না !!আপনি কি মানুষ ?
-না,তবে মানুষ হওয়ার চেষ্টাও করি না ।তুমি কি জানো মায়া ,এই পৃথিবীর তুমি শেষ মানবী ।
-কি বলছেন এসব ? আৎকে ওঠে মায়া ।
-হ্যাঁ ,আমার রাউডার অনুসারে এখন পৃথিবীর জনসংখ্যা ,মানব ২ জন ,মানবী ০ জন , AT96  ১৭৩৩ জন ।তবে AT96 এর সংখ্যা খুব তারাতারি আরো বাড়বে । তুমি যেহেতু আমার রাউডারের আওতা ভুক্ত না ।তাই তুমিই শেষ মানবী । বিলুপ্ত প্রায় ! হা হা হা ! আ্যলেক্সএর হাসিটাও বেশ আলাদা ।
-আপনি একটা বধ্য পাগল ।
মায়া তারাতারি পাশের রুমে চলে যায় এবং বাবাকে নিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়ায় ।
২.বাবা, বাবা, তারাতারি এদিকে এসো ।মায়া তার বাবাকে চিৎকার করে ডাকছে ।
-কিরে মা ?কি হয়েছে ? অবাক হয়ে প্রশ্ন করে মায়ার বাবা ।
-এই দ্যাখো ,মি.আ্যলেক্স ।টিভির দিকে ইশারা করে মায়া ।
একজন AT96 মেয়ে রোবট সংবাদ পাঠ করেছে

-"আজ বিকেল ৫.০০ টার সময় মহামান্য আ্যলেক্সের মৃত্যদন্ড কার্যকর করা হবে ।তার বিরুদ্ধে রোবট নিতীমালা ২নং ভাঙার দায় রয়েছে ।"

মায়া কিছুই বুঝতে পারছে না । সে টিভিটা অফ করতে যাবে ,কিন্তু অফ হচ্ছে না ।তার মেনে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ন খবর বাকি আছে ।
"শহরবাসীদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, AT96 এর প্রজনন ক্ষমতা আবিস্কারের জন্য আজ বিকেল ৬.৩০ এর সময় ড.ফারহানকে সংবর্ধনা দেয়া হবে । তিনি বলেছেন ,অতি শীঘ্যর্ই  পৃথিবী হবে মানষ ও AT96 এর  যৌথ বাসস্থান ।যেখানে মানুষ ও রোবট বসবাস করবে ,নিশ্চিন্তে ।"

মায়া উচ্চস্বরে বলে ওঠে "বাবা,আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না ! এসব হচ্ছেটা কি ?
এবারে ড.নওরোজ বৃত্তান্ত বলা শুরু করে ।
-তোকে প্রথম থেকেই পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলি ।
-হ্যাঁ বাবা ,বলো ।
-আ্যলেক্স আসলে মানুষ না । ও আমার তৈরী প্রথম AT96  রোবট ।ও কে তৈরী করতে আমার প্রায় ১২ বছরেরও বেশি সময় লাগে ।আ্যলেক্সকে আমি বিশেষ ভাবে তৈরী করেছিলাম । ও সব রোবটের থেকে আলাদা এবং উন্নত ।ওর মাঝে আলাদা এক শক্তি ছিলো ,যার মাধ্যমে ও নিজের জ্ঞান নিজেই বাড়াতে পারতো । আ্যলেক্স একদিন লাইব্রেরী থেকে মানব বিরোধী একটা বই পড়ে ,যার ফলে ওর মনে মানুষের বিরুদ্ধে হিংসা ,ক্ষোভ জন্মায় । তখন ও আমায় আটকে রাখে  আর MCC দ্বারা মানব জাতিকে ধংস করতে থাকে,পরোক্ষভাবে । তবে আমি যখন আ্যলেক্সকে আর AT96 মডেলের রোবটগুলোকে বানাই তখন রোবটদের জন্য ২টি আইন প্রয়োগ করি ।
১.সর্বদা মানুষের কল্যানে আত্বনিয়োগ করা
২.মানুষের ক্ষতি হয় এমন কাজ না করা ।
আ্যলেক্স যেহেতু ২ নং আইনটি ভঙ্গ করেছে ,তাই আইন প্রোয়োগকারী AT96  রোবটেরা তার মৃত্যদন্ডের আদেশ দিয়েছে ।
-ওহ ,এই তাহলে রহস্য ! স্বহাস্যে মায়া বলে ওঠে।
সমাপ্ত।


Comments

  1. ধন্যবাদ “ আমার পিরোজপুর” কে

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

পিরোজপুর সদরের কিছু উল্লেখযোগ্য মজাদার খাবার ও খাবারের স্থানের নাম

১.আইচ পুরি ভান্ডার এর পুরি।দামুদার ব্রীজের ঠিক এক পাশেই ছোট্ট করে এই পুরির দোকান  । অনেক জায়গায় পুরি খেলেও এটাকে আপনার বেস্ট বলতে হবে কারন ডাল পুরিতে অনেক ডাল এবং আলু পুরিতে অনেক আলু দেয়।  সন্ধ্যার পর ভরপুর গরম গরম পুরি খাওয়ার লাইন‌ লাগে এই দোকানে । প্রতিটা পুরি মাত্র ৫ টাকা। যে পরিমাণ আলু,ডাল ‌ঠুসায় সেই তুলনায় দাম কমই বলা চলে।ট্রাই করতে পারেন কোন এক সন্ধ্যায় । ২.সিও অফিস, ডাচ বাংলা বুথের পাশের চায়ের দোকানের গরুর দুধের চা। ৩.জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটে অবস্থিত ক্যাফে স্ট্রিট ফুড এর মালাই চা।পরিবেশন স্টাইল দারুন।দাম মাত্র ১৫ টাকা। ৪.দুলালের দধি ভান্ডারের রসগোল্লা, রসমালাই, দধি। ৫.ভাই ভাই মিস্টির দোকানের রসগোল্লা,দধি,রসমালাই। ৬.বেকুটিয়া ফেরিঘাটের রাস্তার পাশের ঝাল মুড়ি। ৭.পিরোজপুর পুরান বাসস্ট্যান্ডে খুলনা বাস কাউন্টারের পাশে দোকানের চিতই পিঠা।পিঠার সাথে মরিচ ভর্তা আর সরিষা ভর্তাটা জোশ লাগে। ৮.শেরে বাংলা মার্কেট এর বিপরীতে স্টার হোটেলে হট কফি। ৯.সিও অফিসের ওখানে ক্যাফে আল মদিনার চকলেট হট কফি,চকলেট কোল্ড কফি । দাম ৫০-৬০ টাকার মত লিখেছেন :জি,এম-আদল

পিরোজপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

    লিখেছেন : জি,এম-আদল পিরোজপুর বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা।প্রকৃতি তার নিজ সাজে অপরুপ সৌন্দর্যে পিরোজপুর জেলাকে সাজিয়েছেন। নদীবিধৌত জেলা পিরোজপুরে রয়েছে সেরা কিছু দর্শনীয় স্থান।পিরোজপুর সদর, ইন্দুরকানি, নাজিরপুর, কাউখালী, ভান্ডারিয়া, মঠবাড়ীয়া, নেছারাবাদ এই সাতটি উপজেলা নিয়ে পিরোজপুর জেলা গঠিত। এই উপজেলাগুলোর প্রায় প্রতিটি উপজেলারই রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য, রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান।সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে ভাসমান পেয়ারা হাট, কবি আহসান হাবিব এর পৈত্রিক ভিটা,রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ি,হরিনপালা রিভারভিউ ইকো পার্ক, ভান্ডারিয়া শিশু পার্ক,ভান্ডারিয়া মিয়া বাড়ি মসজিদ,মঠবাড়িয়ার মমিন মসজিদ, পিরোজপুর এর ডিসি পার্ক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।  ভাসমান পেয়ারা হাট : পিরোজপুর জেলার স্বরুপকাঠি উপজেলার আটঘর,কুরিয়ানা নামক জায়গায়  নৌকায় করে এই (Floating Market) ভাসমান পেয়ারা হাট বসে। কবি আহসান হাবিব এর পৈত্রিক ভিটা: কবি আহসান হাবীব একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলা ভাষার অন্যতম একজন খ্যাতনামা কবি।  আহসান হাবীব এর জন্ম ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি,পিরোজপুর সদর উপজেলার শংকরপাশা গ্রামে

পিরোজপুর জেলা নামকরণের ইতিহাস

পৃথিবী সৃষ্টির পিছনে যেমন ইতিহাস রয়েছে ঠিক তেমনি পৃথিবীর প্রতিটি দেশ,বিভাগ,জেলা ও এলাকা সৃষ্টির পিছনে রয়েছে হাজারো গল্প ও ইতিহাস। তেমনি পিরোজপুর জেলা সৃষ্টি ও নামকরণের পিছনেও রয়েছে নানা গল্প ও ইতিহাস। গবেষকদের মতে,আজকের এ পিরোজপুর সুলতানি আমলে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ অঞ্চল পরিচিতি ছিল ফিরোজপুর নামে। মোগল সম্রাট শাহসূজার অকাল প্রয়াত পুত্র ফিরোজশাহের নামে 'ফিরোজপুর' এবং পরে অপভ্রংশ হিসেবে 'পিরোজপুর' নামকরণ হয়েছে। নাজিরপুর উপজেলার শাখারী কাঠির জনৈক হেলালউদ্দীন মোঘল নিজেকে মোঘল বংশের শেষ বংশধর হিসেবে দাবী করেছিলেন। তাঁর মতে বাংলার সুবেদার শাহ্ সুজা আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার নিকট পরাজিত হয়ে বাংলার দক্ষিণ অঞ্চলে এসেছিলেন এবং আত্মগোপনের এক পর্যায় নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীর পারে একটি কেল্লা তৈরি করে কিছুকাল অবস্থান করেন। মীর জুমলার বাহিনী এখানেও হানা দেয় এবং শাহ্ সুজা তার দুই কন্যাসহ আরাকানে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি অপর এক রাজার চক্রান্তে নিহত হন। পালিয়ে যাওয়ার সময় তার স্ত্রী  এক শিশু পুত্রসহ থেকে যায়। পরবর্তীতে তারা অবস্থান পরিবর্তন করে ধীরে