Skip to main content

গোধূলির শেষ আলো



গল্পটি লিখেছেন: সোহেল রানা রাসেল

          বসন্তের আগমনে চারপাশে সজীবতার ছোঁয়া লেগে গেছে। প্রকৃতি তার সব রঙ দিয়ে সাজিয়ে নিতে ব্যস্ত। বৃক্ষরাজি বিরহে দগ্ধ ডানা ছেটে নতুন স্বপ্নের সবুজ ডানার ফাঁকে ফাঁকে এঁটে দিয়েছে সুরভিত ফুল, কলি। সু-সময় বুঝে কোকিল ও তার মিষ্টি সুর নিয়ে হাজির। সাদা-কালো জীবনে নিজেকে রাঙিয়ে নেওয়ার এইতো সময়। বসন্ত নাকি হৃদয়ে ভালোবাসা নিয়ে আসে। প্রেমিক মনের তপ্ত ভালোবাসা প্রেয়সীর কাছে বিলীন হতে হতে শত সংকোচ ঝরে পড়ে।

        সাদাবের দীর্ঘ আটাশ বসন্তের শেষে একঘেয়ে জীবনে প্রথমবার বসন্তের উষ্ণতা তাকে ছুঁয়ে দিল ঊনত্রিশে। রবীন্দ্র সরোবরে দেখা হয় আদিবার সাথে। পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ের আলাপ চলছে। মা বাবার পছন্দে সাদাবের কোন আপত্তি ছিল না। তবুও দুই পরিবারের ইচ্ছেতে তাদের দেখা করা। জীবনে এতো গভীরভাবে কাউকে উপলব্ধি করা হয়নি তার। প্রথম দেখাতেই মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়েছে তার মন জুড়ে। নিজের মুগ্ধতা আটকে রাখতে না পেরে আদিবাকে বললো- আমি কখনো কারো প্রেমিক হইনি। আমাকে কি আপনার সারা জীবনের প্রেমিক হওয়ার অধিকার দিবেন? আদিবা চুপচাপ। নিরবতা ভেঙে দিতে সাদাব মুখ খুললো। "মৌনতা সম্মতির লক্ষণ" তাহলে আমাকে প্রেমিক করতে অসুবিধে নেই। অসুবিধে থাকার কথা নয় আশা করছি আমি ততটাও দেখতে খারাপ নই। তারপরও আপনার অপছন্দের কথা বলতে পারেন। বাসা থেকে ভেবে আসা কথাগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে আদিবার। তার কথাগুলো যত সহজভাবে বলবে বলে ভেবেছিল, এখন আর কথাগুলো সহজ নেই।

                      জড়তা কাটিয়ে আদিবা নিজের কথা বলতে শুরু করলো- আপনি খুব ভালো একজন মানুষ মা-বাবা বলেছিলেন। আপনার সাথে দেখা হয়ে আমারও তাই মনে হয়। কিন্তু আমার সম্পর্কে জানার পর আপনার আমার প্রতি আগ্রহ থাকবে কিনা জানি না। আপনাকে জেনে শুনে ঠকাতে চাই না। আশা করছি আপনি আমার সব কথা শুনে নিজের সিদ্ধান্ত নিবেন। সাদাব কৌতূহল হয়ে জিজ্ঞেস করল- কি এমন কথা, জানার পর আপনার প্রতি অনাগ্রহ হতে পারে? তাহলে শুনুন- আমি কলেজে ভর্তি হওয়ার পর ফাহাদ নামে এক ছেলের সাথে আমার পরিচয় হয়। আমার কলেজে বেস্ট ফ্রেন্ড মালিহার প্রতিবেশী সিনিয়র ভাই ছিল। একদিন কলেজ গেট এ ফাহাদ মালিহাকে পিছন থেকে অনেকগুলো ডাক দেয়। মালিহার কানে এয়ারফোন থাকায় ও শুনতে পায়নি।

-মালিহা, তোকে কেউ ডাকছে
-কে ডাকছে?
-ঐ যে কালো করে লোকটা
-ও ফাহাদ ভাই!
(ফাহাদ ততক্ষণে আমাদের কাছেই চলে আসে)
-তুমি আমাকে কালো বললে কেন? গায়ের রং ফর্সা বলে অনেক অহংকার করো রূপের!
-সরি ভাইয়া, আমি এভাবে বলতে চাইনি
-বলছো তো, কি চাওনি? মালিহা, ঔষধগুলো বাসায় পৌঁছে দিও। আর এসব ফালতু মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করো না বলে গটগট করে চলে গেল।
আমি তার কথায় চুপসে গেলাম। তাকে কেউ কালো বললে ভীষণ ক্ষেপে যায় বলে মালিহা ওর বাসার পথ ধরলো।
             
           মালিহা ওর জন্মদিনে যেতে অনেক অনুরোধ করে। ও আর ওর ভাইয়া আমাকে পৌঁছে দিবে নিশ্চিতয়তায় বাবা যাওয়ার অনুমতি দেন। অনুষ্ঠান শেষে মালিহার ভাইয়া ব্যস্ত ছিলেন। মালিহা বললো ফাহাদ ভাইয়াকে সাথে নিয়ে যাই। কোন ফাহাদ ভাইয়া? আরে সেদিন যে কালো বলায় খুব ক্ষেপে গিয়েছিল। তার দরকার নেই। উনার যা ষাঁড়ের মতো রাগ! কালো মানুষ কে কালো বলায় কেউ এতো রেগে যায়? তার মানসিক সমস্যা আছে। আমার তাকে একটুও ভালো লাগেনি। তার থেকে আমি একটু অপেক্ষা করেই যাই।

                    দু'দিন পরে ফাহাদ আমাদের বাসার সামনে প্রপোজ করে। আমার পড়াশোনা ছাড়া কোন কিছুতে আগ্রহ নেই। সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব না। আপনি আমাকে আর বিরক্ত করবেন না। তুমি আমাকে অপছন্দ করো জানি। বিশ্বাস করো অনেক ভালোবাসবো তোমায়। একবার তো ভালোবেসে দেখো। কখনো কষ্ট দিব না। তিন মাসের এমন একটি দিন নেই আমার পিছু করেনি। ছুটির দিনে বাসার সামনে দাড়িয়ে থাকতো। প্রতিদিন একজন মানুষের ভালোবাসার আবদার আমার আমি কে বদলে দিতে থাকে। ওর সংকল্পের কাছে আমার অবচেতন মন সাড়া দিয়ে দেয়।

                      তখন দু'জন দু'জনকে অনেক চিনে নিয়েছি। নিজেদের স্বপ্নগুলো সুতোর মতো জাল হয়ে বিস্তৃতি করেছে। আমার সকল ইচ্ছে অনিচ্ছার মূল্য ওর কাছে জীবনের মতো দামী। আমি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করি। ওকে ভালো না বাসলে জানা হতো না ভালোবাসা কি? ওর কথা রেখেছে। আমাকে কখনো কষ্ট দেয়নি বরং এতোটা ভালোবেসেছে নিজেকে কখনো একা মনে হয়নি। অনুতাপ হয়েছে কেন অবহেলায় ওকে কষ্ট দিয়েছি। অনুতাপে দগ্ধ হয়েছি। আমি আমাকে পুরোপুরি কখন সঁপে দিয়েছি নিজেও জানতে পারিনি।

                          আমরা লুকিয়ে বিয়ে করি। বিয়ের প্ল্যান ওরই ছিল। তখনও বেকার বলে সামাজিকভাবে বিয়ে সম্ভব ছিল না। আমরা যখন কাছাকাছি হতাম নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতাম। আমাদের ভালোবাসা কলুষিত হোক চাইনি কখনো। বিকল্প পথে হাটতে আপত্তি ছিল না। এক মাস পরেই ভালোবাসার রং বদলায়। প্রগাঢ় ভালোবাসা কর্পূরের মতো হারিয়ে যায়।  ছোট ছোট বিশ্বাস দিয়ে অন্ধ বিশ্বাস তৈরি হয়। আমিও অন্ধ বিশ্বাস করেছিলাম। আমি কখনো ভাবতে পারিনি মালিহার জন্মদিনে বলা কথাগুলো আমাকে নিঃশ্ব করে দিবে। বিন্দু পরিমাণ ভালোবাসা আমার জন্য তার কাছে ছিল না। যা ছিল আমাকে পোড়ানোর জন্য তার আক্রোশের আগুন। নিজের সাথে নিজের যুদ্ধগুলো কত ভয়াবহ! শুধু মৃত্যুর দূত সে কষ্টগুলো জানে।

                 আদিবার মাথা সাদাবের কোলের উপর। চোখে পানি ছিটিয়ে দিলে জ্ঞান ফিরে এলো। আদিবা মাথা তুলে একটু সরে বসে। ইচ্ছে করছে দৌঁড়ে পালায়। কিন্তু নিজেকে কোথায় লুকাবে? এতোদিনেও যে লুকতে পারলো না। হয়ত পরিবারে আপন জনের মুখ তাকে আগলে রেখেছে। এখন কেমন লাগছে? জ্বি ভালো। আমি আপনাকে বিপাকে ফেলে দিলাম। আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট হলো। হয়ত অপনার স্বপ্নগুলো এতোক্ষণে আমার থেকে মুক্ত হয়েছে। আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আমি এখন বাসায় ফিরতে চাই। আমার গল্প যে এখনো বাকি? সেটুকু শোনার সময় আপনাকে দিতে হবে।

                   আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার। সৃষ্টি করাই আমার কাজ। আমার প্রথম দেখা স্বপ্ন ভেঙে দিতে নয়। ভেঙে যাওয়া স্বপ্নের সাথে জুড়ে দিতে চাই। আমার নষ্ট হওয়া মূল্যবান সময় সার্থক হবে যদি ভরসা করে এ হাতে হাত রাখেন। গোধূলির শেষ আলো নোনাজলে রঙিন স্বপ্ন এঁকে দিল। নীড় ছাড়া পাখিরা আবার আপন বাসায় ফিরতে শুরু করেছে।

                                 

Comments

Popular posts from this blog

পিরোজপুর সদরের কিছু উল্লেখযোগ্য মজাদার খাবার ও খাবারের স্থানের নাম

১.আইচ পুরি ভান্ডার এর পুরি।দামুদার ব্রীজের ঠিক এক পাশেই ছোট্ট করে এই পুরির দোকান  । অনেক জায়গায় পুরি খেলেও এটাকে আপনার বেস্ট বলতে হবে কারন ডাল পুরিতে অনেক ডাল এবং আলু পুরিতে অনেক আলু দেয়।  সন্ধ্যার পর ভরপুর গরম গরম পুরি খাওয়ার লাইন‌ লাগে এই দোকানে । প্রতিটা পুরি মাত্র ৫ টাকা। যে পরিমাণ আলু,ডাল ‌ঠুসায় সেই তুলনায় দাম কমই বলা চলে।ট্রাই করতে পারেন কোন এক সন্ধ্যায় । ২.সিও অফিস, ডাচ বাংলা বুথের পাশের চায়ের দোকানের গরুর দুধের চা। ৩.জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটে অবস্থিত ক্যাফে স্ট্রিট ফুড এর মালাই চা।পরিবেশন স্টাইল দারুন।দাম মাত্র ১৫ টাকা। ৪.দুলালের দধি ভান্ডারের রসগোল্লা, রসমালাই, দধি। ৫.ভাই ভাই মিস্টির দোকানের রসগোল্লা,দধি,রসমালাই। ৬.বেকুটিয়া ফেরিঘাটের রাস্তার পাশের ঝাল মুড়ি। ৭.পিরোজপুর পুরান বাসস্ট্যান্ডে খুলনা বাস কাউন্টারের পাশে দোকানের চিতই পিঠা।পিঠার সাথে মরিচ ভর্তা আর সরিষা ভর্তাটা জোশ লাগে। ৮.শেরে বাংলা মার্কেট এর বিপরীতে স্টার হোটেলে হট কফি। ৯.সিও অফিসের ওখানে ক্যাফে আল মদিনার চকলেট হট কফি,চকলেট কোল্ড কফি । দাম ৫০-৬০ টাকার মত লিখেছেন :জি,এম-আদল

পিরোজপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

    লিখেছেন : জি,এম-আদল পিরোজপুর বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা।প্রকৃতি তার নিজ সাজে অপরুপ সৌন্দর্যে পিরোজপুর জেলাকে সাজিয়েছেন। নদীবিধৌত জেলা পিরোজপুরে রয়েছে সেরা কিছু দর্শনীয় স্থান।পিরোজপুর সদর, ইন্দুরকানি, নাজিরপুর, কাউখালী, ভান্ডারিয়া, মঠবাড়ীয়া, নেছারাবাদ এই সাতটি উপজেলা নিয়ে পিরোজপুর জেলা গঠিত। এই উপজেলাগুলোর প্রায় প্রতিটি উপজেলারই রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য, রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান।সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে ভাসমান পেয়ারা হাট, কবি আহসান হাবিব এর পৈত্রিক ভিটা,রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ি,হরিনপালা রিভারভিউ ইকো পার্ক, ভান্ডারিয়া শিশু পার্ক,ভান্ডারিয়া মিয়া বাড়ি মসজিদ,মঠবাড়িয়ার মমিন মসজিদ, পিরোজপুর এর ডিসি পার্ক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।  ভাসমান পেয়ারা হাট : পিরোজপুর জেলার স্বরুপকাঠি উপজেলার আটঘর,কুরিয়ানা নামক জায়গায়  নৌকায় করে এই (Floating Market) ভাসমান পেয়ারা হাট বসে। কবি আহসান হাবিব এর পৈত্রিক ভিটা: কবি আহসান হাবীব একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলা ভাষার অন্যতম একজন খ্যাতনামা কবি।  আহসান হাবীব এর জন্ম ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি,পিরোজপুর সদর উপজেলার শংকরপাশা গ্রামে

পিরোজপুর জেলা নামকরণের ইতিহাস

পৃথিবী সৃষ্টির পিছনে যেমন ইতিহাস রয়েছে ঠিক তেমনি পৃথিবীর প্রতিটি দেশ,বিভাগ,জেলা ও এলাকা সৃষ্টির পিছনে রয়েছে হাজারো গল্প ও ইতিহাস। তেমনি পিরোজপুর জেলা সৃষ্টি ও নামকরণের পিছনেও রয়েছে নানা গল্প ও ইতিহাস। গবেষকদের মতে,আজকের এ পিরোজপুর সুলতানি আমলে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ অঞ্চল পরিচিতি ছিল ফিরোজপুর নামে। মোগল সম্রাট শাহসূজার অকাল প্রয়াত পুত্র ফিরোজশাহের নামে 'ফিরোজপুর' এবং পরে অপভ্রংশ হিসেবে 'পিরোজপুর' নামকরণ হয়েছে। নাজিরপুর উপজেলার শাখারী কাঠির জনৈক হেলালউদ্দীন মোঘল নিজেকে মোঘল বংশের শেষ বংশধর হিসেবে দাবী করেছিলেন। তাঁর মতে বাংলার সুবেদার শাহ্ সুজা আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার নিকট পরাজিত হয়ে বাংলার দক্ষিণ অঞ্চলে এসেছিলেন এবং আত্মগোপনের এক পর্যায় নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীর পারে একটি কেল্লা তৈরি করে কিছুকাল অবস্থান করেন। মীর জুমলার বাহিনী এখানেও হানা দেয় এবং শাহ্ সুজা তার দুই কন্যাসহ আরাকানে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি অপর এক রাজার চক্রান্তে নিহত হন। পালিয়ে যাওয়ার সময় তার স্ত্রী  এক শিশু পুত্রসহ থেকে যায়। পরবর্তীতে তারা অবস্থান পরিবর্তন করে ধীরে