Skip to main content

একটি ভাইরাসের আত্মকাহিনী



লিখেছেনঃ নাসরিন সিমি

আমি একটা ভাইরাস। আজ আমার জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো
বিশ্বে আমি প্রথম আত্মপ্রকাশ ও সংক্রমণ ঘটাই  চীন দেশের উহান প্রদেশে 2019 সালের ডিসেম্বরে মাসে। সেখানে তিন/চার মাস অবস্থান করি । পরে মানুষ আমার কোভিড-19 নামকরণ করে এবং তারপর আমি ইতালি সফরে যাই। ইতালিতে সবচেয়ে বেশি আমার জন্য আরামদায়ক পরিস্থিতিতে বিরাজমান থাকে। বিশ্বকে উদ্বেগের ফেলি যখনই আমি আমার ক্ষমতা দেখিয়ে। কারণ
ইতালিতে কোভিড- 19 ভাইরাসের কারণে করোনা নামক রোগে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয় ও মৃত্যু হয়।
তারপর যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাজ্য, ইরান, পাকিস্তান, সৌদিআরব, ভারত ঘুরে কোভিড-19আমি চলে আসি বাংলাদেশে।

বাংলাদেশের করোনার দিন--
কোভিড--19 বাংলাদেশের প্রথম প্রবেশ করি সরকারি হিসেবে ৮ মার্চ। বিশেষ বেসরকারী সূত্রে আমি আরো আগেই চীন দেশের থেকে এখানে এসে আক্রমণ এর কথা মনে মনে ভাবি। আক্রমণ করার আগেই এই জাতির কয়েকজন ব্যবসায়ী আমাকে  গুজব বলে প্রচার করে ।  এইসব গুজব সৃষ্টিকারীদের অনেক চ্যালা চামুণ্ডাদের কথা বার্তা শুনে আমি কোভিড 19 একটা ধাক্কা খেলাম। এদেশের মানুষের আমাকে নিয়ে বলা কথা ও প্রতিরোধ সিস্টেম দেখে অবাক হয়ে বেশ কিছু দিন বেহুঁশ হয়ে ছিলাম।
পরে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে এক মহিমান্বিত রাতে এক জন্মদিন পালন উপলক্ষে আতসবাজি ফোটানোর মাঠে আমার হুশ ফিরে আসে এবং সেই প্রথম আমি বিস্তারের সুযোগ পাই। 

এতক্ষণ যে কথা বলতে চাচ্ছিলাম,আমার জীবনের সবচেয়ে বেশি এবং বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে বাংলাদেশে। এদের চেহারা, চরিত্র, বিশ্বাস, জ্ঞান, ধর্ম, শিক্ষার মধ্যে এতো বৈষম্য পৃথিবীতে আর কোথাও নেই।
ছোট একটা দেশের মানুষের মধ্যে এতো ভেদাভেদ, বিশ্বাসের পার্থক্য বিস্ময়কর।
সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য ছিলো আমার কাছে ইব্রাহিম নামের একজন মানুষ। তাঁর গ্রহণযোগ্যতার আগে তার সম্পর্কে কিছু জেনে নিতে তাকে পর্যবেক্ষণ করি, লোকটা আমার এন্ট্রি ভাইরাস এর একটা ফর্মূলা বলেছিলো কিন্তু ভুলক্রমে সে এন্ট্রি ভাইরাসের ফর্মূলার বদলে মাধ্যমিক বইয়ের একটি গনিত হেরফের করে বলে ইউটিউবে পরিচিত হয়ে যায়।
আতসবাজির পরে নোয়াখালী নামের একটি দোয়া মাহফিল সমাবেশে দ্বিতীয় পর্যায়ে আমি অনেক পোষক পেয়ে ছড়িয়ে পড়েছিলাম।

মূলত আমাকে বিস্তার লাভ করতে এই বিশেষ শ্রেণীর অবদান অনস্বীকার্য। এরা জনগণকে বিভ্রান্ত করার মাধ্যমে আমার ক্ষমতা সম্পর্কে অতি তুচ্ছ জ্ঞান করেছে।
আমি অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভাইরাস। আমার কাছে ধনী গরিব ধর্ম বর্ণ ও গোত্র, জাত-পাত ভেদাভেদ কিছুই নেই কিন্তু গুটিকতক ধর্ম ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য আমার নামে বদনাম করেছে। যেমন আমি খাটি মুসলমানদের পোষক করে তাদের আক্রান্ত করিনা, আমি মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করিনা, আমি থানকুনি পাতা খাওয়া, পান খাওয়া মানুষকে পছন্দ করি। তাদের আক্রান্ত নাও করতে পারি। আমার নামে এইরূপ সাম্প্রদায়িক কলঙ্ক রটিয়ে দেবার পরেই আমি মনে মনে ক্ষোভে দুঃখে সবাইকে আক্রান্ত করার জন্য উঠেপড়ে লেগে যাই এবং ততোদিনে আমার সৈন্য সংখ্যা অনেক অনেক বেশি সৃষ্টি হতে থাকে।

তারপরে অবাক হয়ে দেখি বাংলাদেশের কয়েকজন সেলিব্রিটি রাজনৈতিক নেতারা অনবরত মিথ্যা কথা বলে বলে দেশের জনগণ ও ডাক্তারদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছেন। এদের মিথ্যাচার শুনে দুই দিন আমি হতভম্ব হয়ে গেছি। তারা বলেছে আমার চেয়েও তারা শক্তিশালী এবং আমাকে মোকাবিলায় প্রস্তুত। এই তথ্যটি শোনার পর আমি প্রথমে ডাক্তার ও নার্সদের পোষক বানাতে একটু দ্বিধা করি, চিন্তিত হয়ে যাই, আমার সৈন্য সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে এখন আমাদের নেক্সট টার্গেট ছিল হাসপাতালের লোকজন কারণ এদের কাবু করতে পারলে আমরা বাংলাদেশে মোটামুটি স্থায়ী এক!টা ব্রাঞ্চ অর্গানাইজ করতে পারবো।
ভয়ে ভয়ে আমি হসপিটালের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে গেলাম এয়ারপোর্টে থেকে নেমেই।
কিন্তু তাদের অবস্থা দেখে খুশি হয়ে তা তা ধিন ধিন করে নাচলাম অনেক সময়।
এরা ঢাল,তলোয়ার, বর্ম, তীর,ধনুক কিছুই নেই। এমনকি গায়ের বর্মটি এতো এতো নিন্মমানের যে অনায়াসেই আক্রান্ত করে ফেললাম একের পর এক স্বাস্থ্যযোদ্ধাদের। জনপ্রতিনিধিদের দাম্ভিক কথাগুলো মনে করে আনন্দ হচ্ছে আবার কষ্টও হচ্ছে কিছু দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষ গুলোর জন্য। কিছু কিছু চালচোরদের কারণে এরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করছে আমাকে বিস্তার লাভ করতে পোষক হতে ও ভয় নেই তাদের শুধুমাত্র ক্ষুধা ও ত্রাণ সামগ্রীর জন্য, বেঁচে থাকার জন্য। আমি এখন সারা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছি। আগামী সপ্তাহে আমার সৈন্যদের নিয়ে একটা মিটিং ডাকতে হবে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে, বেছে বেছে সাহসী সৈন্যদের নিয়ে একটা আলাদা বিশেষ বাহিনী গঠন করার কথা ভাবছি, যে দলের কাজ হবে
নাগাভূখা মানুষকে বঞ্চিত করে যারা ত্রাণচুরি করছে তাদের। সাধারণ মানুষের  সাথে, ঘরে থাকা মানুষের সাথে যুদ্ধ জয়ের আনন্দ নেই।
এদেশের জনগণ কী বোকা! কী অসহায় ! এদের আক্রান্ত করলে আমার ভাইরাস সোসাইটি তে বদনাম হবে। ভাইরাস প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নাও পেতে পারি, তাই আজ থেকে আমার মিশন হবে মিথ্যাবাদী নেতা, ধোঁকাবাজ ধর্ম ব্যবসায়ী , নিরন্নের অন্ন চোর, যুদ্ধবাজ দেশের প্রেসিডেন্ট , নারী নির্যাতনকারী বাদশাহ, অহংকারী রাজ পরিবারের সদস্য, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বাধানোর পরিকল্পক, ঘুষখোর এরা।
খবর পেয়েছি আমার সৈন্যদলের টার্গেট অনেক ক্ষেত্রেই সফল হয়েছে। এবার মিশন বাংলাদেশের মিথ্যাবাদী ও বিবেকহীন ছোট বড়ো মাপের জনপ্রতিনিধি।
সৈন্যরা, প্রস্তুত হও, এবারের মিশন হবে
ডাইরেক্ট - কিলিং । নো মার্সি।

Comments

Popular posts from this blog

পিরোজপুর সদরের কিছু উল্লেখযোগ্য মজাদার খাবার ও খাবারের স্থানের নাম

১.আইচ পুরি ভান্ডার এর পুরি।দামুদার ব্রীজের ঠিক এক পাশেই ছোট্ট করে এই পুরির দোকান  । অনেক জায়গায় পুরি খেলেও এটাকে আপনার বেস্ট বলতে হবে কারন ডাল পুরিতে অনেক ডাল এবং আলু পুরিতে অনেক আলু দেয়।  সন্ধ্যার পর ভরপুর গরম গরম পুরি খাওয়ার লাইন‌ লাগে এই দোকানে । প্রতিটা পুরি মাত্র ৫ টাকা। যে পরিমাণ আলু,ডাল ‌ঠুসায় সেই তুলনায় দাম কমই বলা চলে।ট্রাই করতে পারেন কোন এক সন্ধ্যায় । ২.সিও অফিস, ডাচ বাংলা বুথের পাশের চায়ের দোকানের গরুর দুধের চা। ৩.জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটে অবস্থিত ক্যাফে স্ট্রিট ফুড এর মালাই চা।পরিবেশন স্টাইল দারুন।দাম মাত্র ১৫ টাকা। ৪.দুলালের দধি ভান্ডারের রসগোল্লা, রসমালাই, দধি। ৫.ভাই ভাই মিস্টির দোকানের রসগোল্লা,দধি,রসমালাই। ৬.বেকুটিয়া ফেরিঘাটের রাস্তার পাশের ঝাল মুড়ি। ৭.পিরোজপুর পুরান বাসস্ট্যান্ডে খুলনা বাস কাউন্টারের পাশে দোকানের চিতই পিঠা।পিঠার সাথে মরিচ ভর্তা আর সরিষা ভর্তাটা জোশ লাগে। ৮.শেরে বাংলা মার্কেট এর বিপরীতে স্টার হোটেলে হট কফি। ৯.সিও অফিসের ওখানে ক্যাফে আল মদিনার চকলেট হট কফি,চকলেট কোল্ড কফি । দাম ৫০-৬০ টাকার মত লিখেছেন :জি,এম-আদল

পিরোজপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

    লিখেছেন : জি,এম-আদল পিরোজপুর বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা।প্রকৃতি তার নিজ সাজে অপরুপ সৌন্দর্যে পিরোজপুর জেলাকে সাজিয়েছেন। নদীবিধৌত জেলা পিরোজপুরে রয়েছে সেরা কিছু দর্শনীয় স্থান।পিরোজপুর সদর, ইন্দুরকানি, নাজিরপুর, কাউখালী, ভান্ডারিয়া, মঠবাড়ীয়া, নেছারাবাদ এই সাতটি উপজেলা নিয়ে পিরোজপুর জেলা গঠিত। এই উপজেলাগুলোর প্রায় প্রতিটি উপজেলারই রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য, রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান।সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে ভাসমান পেয়ারা হাট, কবি আহসান হাবিব এর পৈত্রিক ভিটা,রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ি,হরিনপালা রিভারভিউ ইকো পার্ক, ভান্ডারিয়া শিশু পার্ক,ভান্ডারিয়া মিয়া বাড়ি মসজিদ,মঠবাড়িয়ার মমিন মসজিদ, পিরোজপুর এর ডিসি পার্ক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।  ভাসমান পেয়ারা হাট : পিরোজপুর জেলার স্বরুপকাঠি উপজেলার আটঘর,কুরিয়ানা নামক জায়গায়  নৌকায় করে এই (Floating Market) ভাসমান পেয়ারা হাট বসে। কবি আহসান হাবিব এর পৈত্রিক ভিটা: কবি আহসান হাবীব একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলা ভাষার অন্যতম একজন খ্যাতনামা কবি।  আহসান হাবীব এর জন্ম ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি,পিরোজপুর সদর উপজেলার শংকরপাশা গ্রামে

পিরোজপুর জেলা নামকরণের ইতিহাস

পৃথিবী সৃষ্টির পিছনে যেমন ইতিহাস রয়েছে ঠিক তেমনি পৃথিবীর প্রতিটি দেশ,বিভাগ,জেলা ও এলাকা সৃষ্টির পিছনে রয়েছে হাজারো গল্প ও ইতিহাস। তেমনি পিরোজপুর জেলা সৃষ্টি ও নামকরণের পিছনেও রয়েছে নানা গল্প ও ইতিহাস। গবেষকদের মতে,আজকের এ পিরোজপুর সুলতানি আমলে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ অঞ্চল পরিচিতি ছিল ফিরোজপুর নামে। মোগল সম্রাট শাহসূজার অকাল প্রয়াত পুত্র ফিরোজশাহের নামে 'ফিরোজপুর' এবং পরে অপভ্রংশ হিসেবে 'পিরোজপুর' নামকরণ হয়েছে। নাজিরপুর উপজেলার শাখারী কাঠির জনৈক হেলালউদ্দীন মোঘল নিজেকে মোঘল বংশের শেষ বংশধর হিসেবে দাবী করেছিলেন। তাঁর মতে বাংলার সুবেদার শাহ্ সুজা আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার নিকট পরাজিত হয়ে বাংলার দক্ষিণ অঞ্চলে এসেছিলেন এবং আত্মগোপনের এক পর্যায় নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীর পারে একটি কেল্লা তৈরি করে কিছুকাল অবস্থান করেন। মীর জুমলার বাহিনী এখানেও হানা দেয় এবং শাহ্ সুজা তার দুই কন্যাসহ আরাকানে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি অপর এক রাজার চক্রান্তে নিহত হন। পালিয়ে যাওয়ার সময় তার স্ত্রী  এক শিশু পুত্রসহ থেকে যায়। পরবর্তীতে তারা অবস্থান পরিবর্তন করে ধীরে