Skip to main content

অনন্ত পথের যাত্রী


লিখেছেন: সিরাজুল ইসলাম

আমি আর মাহিম দুজনে বন্ধু, 
আমরা অনন্ত কালের যাত্রী!
দুজনের বন্ধুত্ব একই শরীরে রক্ত আর মাংসের মতো;একে অন্যের পরিপূরক! 
আমাদের রক্তের রং লাল,ঠিক যেমনি উদীয়মান সূর্য আর অস্তমিত সূর্য লাল বর্ণ ধারণ করে!
মাংসের কাঠামোতে ভিন্নতা থাকলেও,আসলে কেউ সহজে পার্থক্য নিরূপণ করতে সমর্থ হন না।

মাহিমের  ভাবনা সৃষ্টির রহস্য নিয়ে, 
"সে ভাবে আমাদের কেউ বিচ্ছিন্ন নয়,আমাদের লক্ষ্য এক,গতিপথ এক!"

তার কথাগুলো চিন্তার রাজ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। সে আমাকে দেখা মাত্রই একটি কথা বলতে কখনো ভুলে যায় না।আর তা হলো-
"এখানে কেউ আগে এসে শেষে যায়,কেউ বা শেষে এসে অসময়ে হারিয়ে যায়!
এখানে শুধু ক্ষণিক ভাবনার সময় থাকে!"
মাহিমের কথাগুলো হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
মাহিম কতইনা চিন্তাশীল!

মাহিমের একটা অদ্ভুত রকমের সমস্যা আছে, সে কোন কথা মাথায় আসতেই যেভাবেই হোক  আমাকে জানাবেই!
একদিন বিকাল বেলায় গ্রামীণ পথ ধরে হাটতে হাটতে বলে উঠল, "বন্ধু, একটা বিষয় ভেবে দেখেছিস? "
আমি বললাম,"কোন বিষয়টার কথা বলছিস বন্ধু?"
"আমাদের রসদ যোগানোর  কথা।আসলে এখনই সময় আসন্ন ঘন দূর্যোগে মাথা তুলে দাড়ানোর জন্য পদ যুগলকে দৃঢ় করার। সঞ্চয় করা দরকার অল্প পুঁজির লভ্যাংশ থেকেও।"
ক্ষাণিক বিরতি দিয়ে আবার বলা শুরু করল মাহিম।
"আমরা কেউ বা আবার ভোগ বিলাসেই মত্ত থাকি,আসন্ন বিপদকে অগ্রাহ্য করেই।পরিণামে অন্ধকার আমাদের গ্রাস করে ফেলে!"

একবার এক প্রতিবেশীর আকস্মিক মৃত্যুর শোকে আমরা শোকে মুহ্যমান প্রায়!
এমন সময়ে দেবদূতের মতো হঠাৎ মাহিমের উদয়!
আমাদের কাছে এসে সেই চিরচেনা ভঙ্গিতে বলতে লাগল,"বন্ধু, এখানে তো আমরা অতিথি, ক্ষণিকের যাত্রা আমাদের।ঠিক যেভাবে পথিক যাত্রা বিরতি দেয়।
আমাদের কেউ অল্পতে পূণ্যের পাহাড় গড়ে;
অগ্রে কিছু পাঠায় আর কিছু অকারণে পশ্চাতে খুইয়ে ফেলে!
আর কারো মুখে উজ্জ্বল হাসির ঝিলিক দেখা দেয় অল্প পূণ্যের বিনিময়েও!" 
কথাগুলো শুনে আমরা বিস্মিত হয়ে যাই, মাহিম  কত নিপূন করেই না সবকিছুই ফুটিয়ে তুলতে পারে!

একসময় মাহিমের একটা বড় সুযোগ আসে,একটু ভিন্ন পথে আগালেই টাকার পাহাড় গড়া যেতো!
কিন্তু এতে মাহিমের এক জবাব,
"আমি তাদের পথই অনুসরণ করবো যারা দুনিয়াকে বেচে দেয়,অনন্ত কালের নিক্তিতে!"
আমি থ বনে গেলাম! কিভাবে মানুষ এমন লোভহীন হতে পারে!
আর বিলাসী জীবনের এমন হাতছানি কেউ প্রত্যাখ্যান করে? 

মাহিমের সাদাসিধে জীবনাচরণই মাহিমকে অনন্য করেছে!
আমি বরাবরই তাকে পর্যবেক্ষণ করতাম।
"মাহিম, সুখকে বিক্রি করেছে পূণ্যের বিনিময়ে; আর দুঃখকে সঙ্গী করে শাস্তির ভয়ে!"এভাবেই তো অমর হওয়া যায়! 

মৃত্যু যখন সন্নিকটে বুঝতে পারে,তখন আমাকে ফিসফিসিয়ে বলে,"বন্ধু, আল্লাহর জন্য তোমাকে ভালেবাসি।আমি তোমার অগ্রপথিক,তোমায় অপেক্ষায় থাকব।"
সেদিন আমি শুধু মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বন্ধুকে বিদায় জানিয়েছিলাম।"আসলে ভবিষ্যত অনিশ্চয়তায় পরিপূর্ণ! 

"এক পূর্ণিমা রজনীতে একটি সুশোভিত উদ্যানের বেঞ্চিতে আমরা দুই বন্ধু বসে গল্প আড্ডায় মশগুল হয়ে যাই।
মাহিম আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে," বন্ধু, তুই কিভাবে আমার সমকক্ষ হয়ে গেলি?আমি
তো তুর আগেই এসেছি এখানে!"

আমি শুধু মাহিমকে বলি,"আমি অগ্রপথিক হতে পারিনি, কিন্তু আমি অগ্রে কিছু রসদ পাঠাতে পেরেছি।যা আমাকে তোমার সঙ্গী হওয়ার সম্মান এনে দিয়েছে। "
সাথে সাথেই মাহিম আমার কপালে চুমু  এঁটে  দেয়!
হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গে এলার্ম বাজতেই।ঘড়ির দিকে থাকিয়ে দেখি রাত তিনটা!
তখনও  মাহিমের কথাগুলো ইথারে ভাসছে!

আসলে মাহিম আমার অনন্ত কালের সঙ্গী, 
সে আমাকে মুক্তির পথে ডাকে,
সে স্বপ্নে এসে বাস্তবের গল্প শোনায়!

Comments

Popular posts from this blog

পিরোজপুর সদরের কিছু উল্লেখযোগ্য মজাদার খাবার ও খাবারের স্থানের নাম

১.আইচ পুরি ভান্ডার এর পুরি।দামুদার ব্রীজের ঠিক এক পাশেই ছোট্ট করে এই পুরির দোকান  । অনেক জায়গায় পুরি খেলেও এটাকে আপনার বেস্ট বলতে হবে কারন ডাল পুরিতে অনেক ডাল এবং আলু পুরিতে অনেক আলু দেয়।  সন্ধ্যার পর ভরপুর গরম গরম পুরি খাওয়ার লাইন‌ লাগে এই দোকানে । প্রতিটা পুরি মাত্র ৫ টাকা। যে পরিমাণ আলু,ডাল ‌ঠুসায় সেই তুলনায় দাম কমই বলা চলে।ট্রাই করতে পারেন কোন এক সন্ধ্যায় । ২.সিও অফিস, ডাচ বাংলা বুথের পাশের চায়ের দোকানের গরুর দুধের চা। ৩.জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটে অবস্থিত ক্যাফে স্ট্রিট ফুড এর মালাই চা।পরিবেশন স্টাইল দারুন।দাম মাত্র ১৫ টাকা। ৪.দুলালের দধি ভান্ডারের রসগোল্লা, রসমালাই, দধি। ৫.ভাই ভাই মিস্টির দোকানের রসগোল্লা,দধি,রসমালাই। ৬.বেকুটিয়া ফেরিঘাটের রাস্তার পাশের ঝাল মুড়ি। ৭.পিরোজপুর পুরান বাসস্ট্যান্ডে খুলনা বাস কাউন্টারের পাশে দোকানের চিতই পিঠা।পিঠার সাথে মরিচ ভর্তা আর সরিষা ভর্তাটা জোশ লাগে। ৮.শেরে বাংলা মার্কেট এর বিপরীতে স্টার হোটেলে হট কফি। ৯.সিও অফিসের ওখানে ক্যাফে আল মদিনার চকলেট হট কফি,চকলেট কোল্ড কফি । দাম ৫০-৬০ টাকার মত লিখেছেন :জি,এম-আদল

পিরোজপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

    লিখেছেন : জি,এম-আদল পিরোজপুর বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা।প্রকৃতি তার নিজ সাজে অপরুপ সৌন্দর্যে পিরোজপুর জেলাকে সাজিয়েছেন। নদীবিধৌত জেলা পিরোজপুরে রয়েছে সেরা কিছু দর্শনীয় স্থান।পিরোজপুর সদর, ইন্দুরকানি, নাজিরপুর, কাউখালী, ভান্ডারিয়া, মঠবাড়ীয়া, নেছারাবাদ এই সাতটি উপজেলা নিয়ে পিরোজপুর জেলা গঠিত। এই উপজেলাগুলোর প্রায় প্রতিটি উপজেলারই রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য, রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান।সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে ভাসমান পেয়ারা হাট, কবি আহসান হাবিব এর পৈত্রিক ভিটা,রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ি,হরিনপালা রিভারভিউ ইকো পার্ক, ভান্ডারিয়া শিশু পার্ক,ভান্ডারিয়া মিয়া বাড়ি মসজিদ,মঠবাড়িয়ার মমিন মসজিদ, পিরোজপুর এর ডিসি পার্ক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।  ভাসমান পেয়ারা হাট : পিরোজপুর জেলার স্বরুপকাঠি উপজেলার আটঘর,কুরিয়ানা নামক জায়গায়  নৌকায় করে এই (Floating Market) ভাসমান পেয়ারা হাট বসে। কবি আহসান হাবিব এর পৈত্রিক ভিটা: কবি আহসান হাবীব একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলা ভাষার অন্যতম একজন খ্যাতনামা কবি।  আহসান হাবীব এর জন্ম ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি,পিরোজপুর সদর উপজেলার শংকরপাশা গ্রামে

পিরোজপুর জেলা নামকরণের ইতিহাস

পৃথিবী সৃষ্টির পিছনে যেমন ইতিহাস রয়েছে ঠিক তেমনি পৃথিবীর প্রতিটি দেশ,বিভাগ,জেলা ও এলাকা সৃষ্টির পিছনে রয়েছে হাজারো গল্প ও ইতিহাস। তেমনি পিরোজপুর জেলা সৃষ্টি ও নামকরণের পিছনেও রয়েছে নানা গল্প ও ইতিহাস। গবেষকদের মতে,আজকের এ পিরোজপুর সুলতানি আমলে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ অঞ্চল পরিচিতি ছিল ফিরোজপুর নামে। মোগল সম্রাট শাহসূজার অকাল প্রয়াত পুত্র ফিরোজশাহের নামে 'ফিরোজপুর' এবং পরে অপভ্রংশ হিসেবে 'পিরোজপুর' নামকরণ হয়েছে। নাজিরপুর উপজেলার শাখারী কাঠির জনৈক হেলালউদ্দীন মোঘল নিজেকে মোঘল বংশের শেষ বংশধর হিসেবে দাবী করেছিলেন। তাঁর মতে বাংলার সুবেদার শাহ্ সুজা আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার নিকট পরাজিত হয়ে বাংলার দক্ষিণ অঞ্চলে এসেছিলেন এবং আত্মগোপনের এক পর্যায় নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীর পারে একটি কেল্লা তৈরি করে কিছুকাল অবস্থান করেন। মীর জুমলার বাহিনী এখানেও হানা দেয় এবং শাহ্ সুজা তার দুই কন্যাসহ আরাকানে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি অপর এক রাজার চক্রান্তে নিহত হন। পালিয়ে যাওয়ার সময় তার স্ত্রী  এক শিশু পুত্রসহ থেকে যায়। পরবর্তীতে তারা অবস্থান পরিবর্তন করে ধীরে