লিখেছেন:জি,এম-আদল
সহ-উদ্যোক্তা:amarpirojpur.com
নার্সারী করে সাফল্য পেয়েছেন বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ উপজেলার মোঃ আলতাফ হোসেন। বৃক্ষরোপন ও পরিচর্যা তার শখ। এরই জের হিসেবে ২০১০ সালের দিকে মাত্র ২৫০ টাকা দিয়ে চারটি ছোট ক্যাকটাস কিনে শুরু করেন ক্যাকটাসের ব্যক্তিগত কালেকশন। বর্তমানে তার বাগানে রয়েছে দেশী-বিদেশী প্রায় ১৫০ প্রজাতির ক্যাকটাস, ১০০ প্রজাতির অর্কিড, রয়েছে আরও ৭০-৮০ প্রজাতির ইনডোরের গাছ। একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর পাশাপাশি শোভাবর্ধন গাছ বিক্রি করে অতিরিক্ত আয় করছেন প্রতিমাসে ১৫-২০ হাজার টাকা। এ প্রসংগে তিনি বলেন- "গাছ বিক্রি করে আয় করা যায়, আগে কখনো ভাবিনি। শুধুমাত্র শখের বসে শুরুটা করেছিলাম। পরে গাছ সংগ্রহের একটা নেশা হয়ে গেল। যেখানেই যাই নজর থাকে গাছের দিকে। কিন্তু বাংলাদেশে ক্যাকটাস, সাকুলেন্টস, অর্কিডের বাণিজ্যিক কোন প্রতিষ্ঠান না থাকায় বা সীমিত আকারে হওয়ায় এ জাতীয় গাছ কালেকশন করা খুব কঠিন ও ব্যয়বহুল হয়ে পরে। অনেক সময় নতুন নতুন গাছের সঠিক পরিচর্যার না জানার কারনে পঁচেও যায়। তবুও মনোবল না হারিয়ে আবারও নতুন গাছ দেখলেই সংগ্রহ করতে থাকি। চলতে থাকে ধৈর্যের পরীক্ষা। এক পর্যায়ে লক্ষ্যকরা গেল এ জাতীয় অর্নামেন্টাল গাছের দেশে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এরপর ২০১৬ সালে পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলায় পরপর দুবার বৃক্ষমেলায় অংশগ্রহন করে প্রথম হই। ততসময়কালীন মাননীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রী জনাব আনোয়ার হোসেন মঞ্জু গাছের কালেকশন দেখে প্রশাংসা করেন। উপজেলা কৃষি অফিসার জনাব তৌহিদ উদ্দিন এ বিষয়ে আমাকে উৎসাহ প্রদান ও সার্বিক সহযোগিতা করেন। ফলে বাগান করার উৎসাহ আরও বৃদ্ধিপেতে থাকে। ভাবনা আসে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করার। প্রাথমিক অবস্থায় স্বল্প পরিসরে উৎপাদন শুরু করি ও একটি ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে বিক্রয় করতে থাকি। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে বাগানে প্রায় ০৫ লক্ষাধিক টাকার গাছ ও উপকরণ আছে। যার অধিকাংশই গাছ বিক্রির অর্থ ও নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে এসেছে।
ইতিমধ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ বিষয়ক কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহনের ফলে শহরাঞ্চলে গাছ বিষয়ক আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। শহুরে ভ্যাপসা গরমের মাঝে এক টুকরো নির্মল বাতাস ও প্রাকৃতিক পরিবেশ কতটুকু গুরুত্বপূর্ন তা অনেকেই বুঝতে চলেছেন। আশার কথা হচ্ছে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ভাবে ইনডোর ও শোভাবৃদ্ধিকারী গাছের নার্সারী করা সম্ভব হলে যেমন প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরে আসবে পাশাপাশি কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকারত্ব হ্রাস ও আয়েরও একটা মাধ্যম সৃষ্টি হবে। বৃহৎ পরিসরে করা গেলে রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করা সম্ভব এ খাতে। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশে থাইল্যান্ডে অর্থনীতির বড় একটি উৎস হচ্ছে গাছ।"
আলতাফ হোসেন আরও বলেন- "বর্তমানে শুধু গাছ উৎপাদন ও বিক্রি নয়। নতুন বাগানী সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করে থাকি পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কয়েকটি গাছ বিষয়ক ফেসবুক গ্রুপে বিনামূল্যে গাছের চারা বিতরণ করে আসছি।"
সাফল্য হিসাবে উপজেলা পর্যায়ে ক্রেষ্ট, সার্টিফিকেট পেয়েছেন তিনি। এ ছাড়াও দীপ্ত টেলিভিন কর্তৃক প্রচারিত “দীপ্ত কৃষি” তে প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েেেছ। জাতীয় গণমাধ্যম দৈনিক ইত্তেফাকসহ কয়েকটি পত্রিকাতেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তার।
আলতাফ হোসেন আরও জানান বেকার-যুবক থেকে শুরু করে চাকুরীজীবীসহ যে কেউ ইচ্ছা করলে এরূপ বাগান করার মাধ্যমে বাড়তি আয়ও করতে পারেন। আধুনিক কৃষি বাজারে তথা সচেতন নাগরিকদের কাছে অর্নামেন্টাল গাছের কদর দিন দিন বাড়ছে। একদিকে সৌন্দর্য্য এবং অপরদিকে পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখছে এই শোভাবর্ধনকারী গাছগুলো। আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা পেলে আরও প্রসারিত করতে পারেন তার বাগান।তিনি উদ্যোক্তা বিষয়ে আরো দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে পিরোজপুর ইএসডিপি থেকে ৮ম ব্যাচে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
যে কেউ চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার সন্নিকটে পূর্ব চন্ডিপুর গ্রামে আলতাফ হোসেনের ক্যাকটাস নার্সারীতে।
Post a Comment